More

    হতাশায় শেষ হচ্ছে ইলিশের মৌসুম, আসছে নিষেধাজ্ঞা

    অবশ্যই পরুন

    ইলিশের ভরা মৌসুম শেষের দিকে। কিন্তু এবার মোকামে নেই আগের মতো ইলিশের দেখা; দামও অস্বাভাবিক। এসবের মধ্যেই অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মা ইলিশ রক্ষায় আবারও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এসব নিয়ে হতাশ জেলে, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের প্রশ্ন, ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ কি এ বছর আর মিলবে না। মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নানা প্রতিকূলতার কারণে নদীতে আর ইলিশ বাড়ানো সম্ভব নয়।

    এদিকে চারটি কারণে সাগর মোহনায় জাটকা রক্ষা এবং ইলিশ আহরণে ব্যর্থতার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ। সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে মাছের মূল্য নির্ধারণী সভায় ইলিশের উৎপাদন কমা এবং অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল নগরের পোর্ট রোড ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশের মোকামে ক্রেতার ঢল।

    জায়গায় জায়গায় ইলিশ কেনাবেচা চলছে। গোটা মোকামেই ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের ওপরে। বাকি ২০ শতাংশ ইলিশ এলসি সাইজ এবং কোথাও কোথাও ১ কেজির সাইজের ইলিশ দেখা গেছে। মোকামের লিয়া আড়তঘরের স্বত্বাধিকারী আড়তদার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ইলিশের আমদানি কম। সোমবার দেড় শ মণের মতো মোকামে ইলিশ উঠেছে। এর আগের দিন ছিল আড়াই শ মণ। তিনি জানান, গত বছরের চেয়ে এবার কেজিপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকার বেশি ইলিশের দাম বেড়েছে। তা ছাড়া ভারতে ইলিশ রপ্তানির কারণে বড় আকৃতির ইলিশ বরিশালে এখন কম আসছে।’

    পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, সোমবার ১ কেজির ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২,১৭৫ টাকা। একইভাবে এলসি সাইজের (৭০০-৯০০) ইলিশ প্রতি কেজি ১,৯০০ টাকা এবং ৫০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১,৫০০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর ইলিশের দাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজিতে বেড়েছে।

    এদিকে নদীতীরের জেলেরা ইলিশ নিয়ে আরও বেশি হতাশ। মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়ার মেঘনাতীরের জেলে তোফায়েল হোসেন, বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীতীরের জেলে আব্দুস সালাম জানান, ইলিশ এখন কিছু মিলছে। কিন্তু তাতে দাদন (ঋণ) মেটানো সম্ভব নয়। কারণ, আগামী মাসেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এখনো ধরা না পড়লে ইলিশ জালে কবে পাবেন তাঁরা? মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় গত বছর নিষেধাজ্ঞা হয়েছিল ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত।

    সাধারণত পূর্ণিমা ও অমাবস্যার ওপর নির্ভর করে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী এ বছর ৭ অক্টোবর পূর্ণিমা শুরু। এর ৩ দিন পিছিয়ে দেওয়া হলে এবার ৫ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হতে পারে। আর অমাবস্যা বিবেচনা করে নিষেধাজ্ঞা পিছিয়ে দেওয়া হলে পরের বছর মাছ উৎপাদন কমে যাবে।

    কারণ, অক্টোবরের ২১ তারিখ অমাবস্যা। ৩ দিন পিছিয়ে দিলে ১৮ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর নিষেধাজ্ঞা হবে। এমনটা হলে মা ইলিশ নির্বিচার ধরার সুযোগ করে দেওয়া হবে। চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ বিশেষজ্ঞ ড. আনিছুর রহমান জানান, ডুবোচর, আবহাওয়া পরিবর্তন, পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া, বৃষ্টিপাত হ্রাস, অবৈধ কারেন্ট জাল এবং জাটকা রক্ষায় ব্যর্থতার কারণে ইলিশের আহরণ কমে আসছে। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, ‘ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং দাম বাড়ার বিষয়ে আমরা মনিটরিং করছি।

    জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় এত চেষ্টার পরও সফলতা আসছে না। এর কারণ, আমরা সাগরে ইলিশ রক্ষা এবং আহরণে ব্যর্থ। ট্রলিং বোট, সাগরের মুখে জাল, বিদেশি বোট এবং বাণিজ্যিক ট্রলার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা—এই চার কারণে ইলিশ উৎপাদন গত বছর প্রায় ৪০ হাজার টন কমে গেছে। এবারও ইলিশের উৎপাদন কমবে বলে তিনি মনে করেন।

    এমদাদুল্যাহ আরও বলেন, নদীতে শত চেষ্টা করেও ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ, জলবায়ুর পরিবর্তন, পানিসংকট, ডুবোচর, নাব্যতাসংকটের কারণে নদীতে সব মাছের উৎপাদন কমছে। বরিশাল জেলা মার্কেটিং অফিসার এস এম মাহবুব আলম বলেন, তাঁরা পণ্যের বাজারদর জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন। কিন্তু ইলিশের দাম বাড়ার রহস্য খোঁজার সুযোগ নেই।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

     বরিশালে পানিতেই চলছে ক্লাস, ৩৫ বছরেও মেলেনি পাকা ভবন

    বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের ১৩০ নম্বর দক্ষিণ ভূতেদিয়া নব আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও, দীর্ঘ...