ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চৌদ্দবুড়িয়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিরোধীয় জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এরআগে বিরোধপূর্ণ জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হলেও পুনরায় কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদার।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি হলো দক্ষিণ চৌদ্দবুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ চৌদ্দবুড়িয়া আদর্শ মাধ্যমকি বিদ্যালয়। জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় ২০০৭ সালে ওই বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা দাবি করে আব্দুর রাজ্জাক মিয়া নামের এক ব্যক্তি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আদালত বিরোধপূর্ণ জমিতে উভয় পক্ষকে স্থিতিবস্তা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে- চৌদ্দবুড়িয়া মৌজার জে এল নং-১৩৯, খতিয়ান ৫৪৪, এসএ ৮৯৮ দাগের জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় ২০০৭ সালে ওই বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা দাবি করে আব্দুর রাজ্জাক মিয়া আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তবে নিষেধাজ্ঞা দিলেও ওই দুই স্কুল কর্তৃপক্ষ আইন অমান্য করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চালিয়ে যান। এদিকে আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার মৃত্যুর পর বর্তমান বাদী মাইনুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, সবুর গং পুনরায় আদালতে হাজির হয়ে ১৮০/২০০৭ মামলার উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কেন কাজ চালিয়ে যাওয়ায় আদালতের শরনাপন্ন হলে গত ২৩ জুন পুনরায় মামলাটির সুনানি করে আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এ দফাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কুমকুম বেগম ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম মিয়া ঠিকাদারের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যান। এ নিয়ে ওই দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী এবং এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও কেউ মুখ খুলছে না। নাম প্রকাশে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন- আদলতের আদেশ অমান্য করার বিচার আদালত করবে। যাতে মানুষের আইনের প্রতি শ্রোদ্ধা নষ্ট না হয়, উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং হেড ক্লার্ক বিষয়টি জানেন।
গত ৪ আগষ্ট স্থানীয়রা আদালতের নিশেধাজ্ঞার বিষয়টি নোটিশ আকারে দেওয়ালে লাগিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে একটি কপি প্রেরণ করা হয়। এ সময় তিনি স্থানীয়দের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকরা তাদের মত করে কাজটি চালিয়ে যান। বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং বিভাগীয় শিক্ষা দপ্তরকে অবহিত করা হবে।
এদিকে বাদী পক্ষকে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ এসএ ৫৪৪ খতিয়ানের জমির প্রকৃত মালিক রহিম খান। তিনি বলেন- আমাদের পৈত্তিক সম্পত্তি মামলার বাদী পক্ষ স্কুলের নামে জাল দলিল করে দেন এবং তার সাথে মূল মালিকদের ও স্কুলকে বিবাদী করে মামলাটি করেন। তিনি আরও বলেন- ২৯ জুলাই আমি নিজে আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশের কপি ২টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে পৌছায় কিন্ত তারা কাগজটি রাখেননি। যার প্রমাণ ওই দুই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষিকাবৃন্দ।
রহিম খানের দাবি- ৫৫ শতাংশ জমি প্রাথিমিক বিদ্যালয়ের নামে আছে কিন্তু বিদ্যালয়টি যেখানে অবস্থিত সেখানে বিদ্যালয়টির কোন বৈধ জমি নেই। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, বিদ্যালয়ের প্রকৃত জমি উদ্ধার করার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারন না করে ১২৭ দক্ষিণ চৌদ্দবুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় চতুর্দিকের সিমানা প্রাচির নির্মাণে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আদালতের নিশেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রধান শিক্ষিকরা যদি কাজটি সমাপনি কোন ছাড়পত্র প্রদান করেন, সেটি আদালত দেখবে বলে তিনি মনে করেন।
বিষয়টি অস্বীকার করে দক্ষিণ চৌদ্দবুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোসা. কুমকুম বেগম বলেন- সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ থাকলেও পুনরায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজ করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন- না, কাজতো বন্ধই রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে দক্ষিণ চৌদ্দবুড়িয়া আদর্শ মাধ্যমকি বিদ্যালয়ের শহিদুল ইসলাম মিয়ার মুঠোফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে নলছিটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শিরিন আকতার বলেন- ওই দুই বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। তবুও যদি কেউ নির্দেশনা অমান্য করে কাজ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।