More

    গৌরনদীতে চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য: বহিষ্কার হলেও থামছে না অরাজকতা

    অবশ্যই পরুন

    বরিশালের গৌরনদীতে সদ্য বহিষ্কৃত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম রোকন ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। একসময় যাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো—“নুন আনতে পান্তা ফুরাত”—আজ তারা রাজনীতির ছত্রছায়ায় “আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ” হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এলাকায় এখন তাদের দাপট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। কেউ প্রতিবাদ করলে তার কপালে জোটে হুমকি, মামলা কিংবা মিথ্যা অপবাদ। গ্রামবাসীর ভাষায়—“গরিবের ঘরে শিয়াল ঢুকলে হাঁড়ি উল্টে দেয়ার মতো অবস্থা।” প্রশাসনও সব জেনেশুনে দেখেও না দেখার ভান করছে।

    স্থানীয়দের ক্ষোভ—দল থেকে বহিষ্কার করলেও রোকন বাহিনীর দৌরাত্ম্য থামছে না। বরং প্রতিদিন নতুন রূপে তারা অরাজকতা ছড়িয়ে পুরো জনপদকে আতঙ্কে রাখছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—দল শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করলেও প্রশাসন কেন নির্বিকার দর্শকের ভূমিকায় থাকবে?

    রাতের আঁধারে সরকারি গাছ কাটার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েন রোকন। অবশেষে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম খান বাপ্পি স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়—দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিজামুর রহমান নিজাম বলেন, “রোকন দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

    গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার টরকী বন্দরের ছাগলহাট এলাকায় সরকারি সড়কের পাশে সাতটি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ ওঠে রোকনের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গাছ জব্দ করে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। ১১ সেপ্টেম্বর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। কিন্তু সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ার পাশাপাশি তদন্ত চলাকালীন অবস্থায় তার সমর্থকরা টরকী বাসস্ট্যান্ড ও বন্দর এলাকায় প্রকাশ্যে বিক্ষোভ মিছিল বের করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই মিছিলে স্থানীয় কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীদের সামনের সারিতে দেখা যায়, যা সাধারণ মানুষের আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়।

    অভিযোগের বিষয়ে রোকন বলেন, তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা মিছিল করেছে জেনে তিনি সঙ্গে সঙ্গে থামাতে বলেছেন। গাছ কাটার বিষয়ে দাবি করেন—তার আত্মীয় হাজী আবুল হোসেন আবেদন করেছিলেন এবং তিনি ভেবেছিলেন অনুমতি পাওয়া গেছে। তবে হাজী আবুল হোসেন বলেন, আবেদন করলেও কোনো অনুমতি পাননি, অথচ পরে দেখেন রোকন লোকজন নিয়ে গাছ কাটছে।

    গৌরনদী মডেল থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, ইউএনও’র নির্দেশে পুলিশ গিয়ে গাছ কর্তন বন্ধ করে এবং গাছ জব্দ করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি বলেন, গাছ কাটার জন্য আবেদন এলেও অনুমোদন দেওয়া হয়নি এবং বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    চাঁদা না দেয়ায় সন্ত্রাসী হামলায় দোকান মহাজনকে হাতুড়ি দিয়ে গুরুতর জখম: আটক-৩

    অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে অনতিবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থার দাবি করেন ভুক্তভোগীরা। এর আগে সন্ত্রাসীরা চাঁদা চেয়ে প্রাণ নাশের হুমকি...