দিন দিন নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। গভীর নলকূপেও উঠছে না পানি। এতে ঝালকাঠিতে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। জলবায়ুর বৈশ্বিক প্রভাব আর ভূগর্ভস্থ পানির অপচয়কে দায়ী করে বৃষ্টি ও উপরিভাগের পানিকে বিকল্প ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এক কলসি পানি তুলতে আধা ঘণ্টা সময় লাগছে। তাও ঝির ঝির করে পড়ছে। নলকূপের ওপর দিয়ে পানি ঢেলে কিংবা বারবার মেরামত করেও কাজ হচ্ছে না। টিউবওয়েলেগুলোতে পানি তুলতে রীতিমতন ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। পুরুষের তুলনায় নারীদের কাছে এ যেন চরম ভোগান্তির বিষয়। এ অবস্থা এখন ঝালকাঠির শহর-গ্রাম সবখানেই।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগে যেখানে মাটির ৭ থেকে ৮’শ ফুট গভীরে পানি মিলত, এখন তা এক হাজার ফুট গভীর থেকেও তোলা যাচ্ছে না। দিন দিন যেন মাটির গভীরের পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। ফলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট।
শহরের কামারপট্টির বাসিন্দা মনির হোসেন মিন্টু বলেন, ‘জেলা শহরের প্রায় সবগুলো গভীর নলকূপ থেকেই এখন আর পানি উঠছে না। আধাঘণ্টা চেপে ঝিরিঝিরি করে পানি পাওয়া যাচ্ছে। এতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।’
জেলা শহরে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে কাজ করেন তরুণ মাহাবুব সৈকত। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন পৌরসভার পাম্পের মাধ্যমে নাগরিকদের যে পানি সরবরাহ করা হয় তা সবই ভূগর্ভস্থ পানি। আমরা তা খাওয়া ছাড়াও গোসল ও ধোয়া মোছাসহ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে অপচয় করছি। কেবল খাওয়ার পানি ছাড়া অন্য সব কাজে ভূ-উপরিভাগের অর্থাৎ নদী খালের পানি পৌরসভার পক্ষ থেকে সরবরাহ করা ব্যবস্থা নিলে ভূগর্ভস্থ পানির অভাব দূর হবে।’
এ ব্যাপারে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার এরশাদুজ্জামান মৃদুল বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ছাড়াও শক্তিশালী পদ্মা মেশিনের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে প্রাত্যহিক কাজে অপচয় এবং কৃষি ক্ষেত্রে ইরিগেশনের ফলে মাটির গভীরের পানির স্তর দিন দিন নেমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বৃষ্টির পানি এবং পুকুর-জলাশয়সহ উপরিভাগের পানি বিশুদ্ধ করে বিকল্প ব্যবহারে প্রকল্প শুরু করা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, ঝালকাঠি জেলায় প্রায় ৭ লাখ মানুষের বসবাস। এরমধ্যে বেশির ভাগ মানুষ পানি পানের জন্য গভীর নলকূপের ওপরই নির্ভর করে আসছেন।