ইসরায়েলে আটক গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অভিযাত্রীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) কমিটি। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসরায়েলের নৌবাহিনী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মিশনের নৌযানগুলো এবং ক্রু ও অভিযাত্রীদের আটকের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন মিশনের অভিযাত্রীরা।’
ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বন্দর থেকে গাজার উপকূলের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ মিশনের অন্তর্ভুক্ত ৪৩টি নৌযান। সুইডেনের নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলন কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ও রাজনীতিবিদ মান্ডলা ম্যান্ডেলাসহ ৪৪টি দেশের ৫০০ জন নাগরিক ছিলেন সেই মিশনে।
এই নাগরিকদের কেউ পার্লামেন্টারিয়ান, কেউ আইনজীবী, কেউ রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মী এবং কেউ বা স্বেচ্ছাসেবী। কিন্তু গাজার জলসীমায় কাছাকাছি যাওয়ার পরপরই একটি ছাড়া সব নৌযান আটক করে ইসরায়েলের নৌবাহিনী। নৌযান, ক্রু এবং আরোহীদের নিয়ে যাওয়া হয় ইসরায়েলের বন্দরে। গত বুধবার রাতে প্রথমে ১৩টি নৌযান আটকায় ইসরায়েলের নৌবাহিনী।
এর পরও বাকি ৩০টি নৌযান গাজার উদ্দেশে এগিয়ে যাচ্ছিল। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একে একে ২৯টি নৌযান আটক করে ইসরায়েলের নৌ সেনারা। সর্বশেষ নৌযানটিকে আটক করা হয়েছে শুক্রবার সকালে। ফ্লোটিলার আটক চার অভিযাত্রীকে এরই মধ্যে ইসরায়েল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
তবে তাঁদের নাম ও পরিচয় সম্পর্কে কিছুই জানায়নি। এদিকে গাজার জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা বহনকারী আন্তর্জাতিক জলসীমায় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটকে দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই কাজ আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকার বলেছে, তারা গাজাগামী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় থাকা তার নাগরিকদের কূটনৈতিক সুরক্ষা দিতে পারবে না।
এ ছাড়া গাজা ফ্লোটিলায় ২০ জনেরও বেশি সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল। প্যারিসভিত্তিক মিডিয়া ওয়াচডগ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) সাংবাদিকদের ইসরায়েলের আটকের নিন্দা জানিয়েছে, যাঁরা গাজাগামী ত্রাণ ফ্লোটিলায় জাহাজ থেকে আটক শত শত কর্মীর মধ্যে ছিলেন।
আরএসএফ জানিয়েছে যে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ২০ জনেরও বেশি বিদেশি সাংবাদিক ছিলেন, যা গত মাসে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। জাতিসংঘ জানিয়েছে যে গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। আরএসএফ গ্রুপের ক্রাইসিস ডেস্কের প্রধান মার্টিন রক্স বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা এবং তাঁদের কাজ করতে বাধা দেওয়া তথ্য প্রদান এবং তথ্য পাওয়ার অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।’
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে ৪৭০ জন অভিযাত্রীকে আটকের কথা নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল। পত্রিকাটি জানিয়েছে, এসব অভিযাত্রীকে ফেরত পাঠাতে প্রস্তুত ইসরায়েল।
সূত্র : আলজাজিরা, রয়টার্স, আনাদোলু
