More

    খাগড়াছড়িতে সহিংসতায় পর্যটন খাতে ১৫ কোটি টাকা ক্ষতি

    অবশ্যই পরুন

    খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীর ধর্ষণ মামলা কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতায় তিনজন নিহত এবং বহু ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও যানবাহন ধ্বংসের পাশাপাশি পর্যটন খাতে প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সাজেক দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হলেও এর প্রবেশদ্বার খাগড়াছড়ি হওয়ায় জেলার অর্থনৈতিক গুরুত্বে পর্যটন শিল্প প্রধান ভুমিকা রাখে।

    প্রতিটি সহিংস ঘটনায় জেলা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় পর্যটন খাতে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’ নামের একটি পাহাড়ি সংগঠন খাগড়াছড়িতে অর্ধদিবস সড়ক অবরোধের ডাক দেয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা সদর, পৌর এলাকা ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে।

    ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় সংঘটিত সহিংসতায় তিন পাহাড়ি যুবক নিহত এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ প্রায় ৩০ জন আহত হন। অগ্নিসংযোগে বহু ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি অফিস, গাড়ি ও মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। এই অস্থিরতায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকরা আটকা পড়ে। সাজেকে আটকা পড়া পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ২,১০০ জন। খাগড়াছড়ি জেলা সদরে আটকা পড়ে সহস্রাধিক পর্যটককে নিরাপত্তাবাহিনীর সহায়তায় তাদের গন্তব্যে পাঠানো হয়।

    খাগড়াছড়ি সদরে সুপরিচিত আবাসিক হোটেল ‘গাইরিং’ ব্যবস্থাপক প্রান্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, অশান্ত পরিস্থিতির কারণে গেল সপ্তাহের সব বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ খালি থাকে হোটেল। জেলা সদরের ১৫-২০ হোটেলের সবগুলোই একই অবস্থায় পড়তে হয়। একইভাবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট পরিবহণ ব্যবসায়ও প্রচুর ক্ষতির কথা জানান ব্যবসায়ীরা।

    খাগড়াছড়ি জীপ মালিক সমিতির সভাপতি মো. মফিজুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে প্রতিদিন সাজেকে তাদের ২০০-২৫০টি গাড়ি পর্যটকদের নিয়ে যাতায়াত করে। গাড়ি প্রতি ভাড়া প্রায় ১০ হাজার টাকা। এ হিসেবে সাজেকগামী গাড়িগুলো দৈনিক ২০-২৫ লাখ টাকা ভাড়া পায়। প্রায় তিন হাজার পরিবহন শ্রমিক রয়েছে গাড়িগুলোতে।

    সহিংসতার ঘটনায় গড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় পরিবহন ব্যবসায়ীরা প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত ৮-৯ দিনে পরিবহন ব্যবসায়ীরা প্রায় দুই কোটি টাকার ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। গাড়ি বন্ধ থাকায় এ খাতে জড়িত শ্রমিকরা অর্থকষ্টে দিন কাটিয়েছে। সমিতির উদ্যোগে শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

    পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাগড়াছড়ির প্রথম সারির এক ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, পাহাড়ি আঞ্চলিক দলগুলোর সংঘাত ও পাহাড়ি-বাঙ্গালি সহিংস ঘটনাই খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্পের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু এগিয়ে গেলেই হিংসাত্মক ঘটনা আবার পেছনে টেনে আনে। গত বছরও এ সময়েই সহিংস ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় পর্যটন খাত।

    গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চোর এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জাতিগত সংঘাত শুরু হয়। এ সংঘাতে প্রাণ হারায় তিনজন। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে সেই বছর ২০ সেপ্টেম্বর হতে একটানা ১৪ দিন পর্যটকশূন্য থাকে খাগড়াছড়ি ও সাজেক। ফলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা কয়েক কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে।

    এদিকে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা থেকে জুম্ম ছাত্র জনতা তাদের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করার পর খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। গত দুদিনে স্বল্প সংখ্যক পর্যটক এসেছেন। সাজেক কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর ইত্তেফাককে বলেন, শুক্রবার ৩০-৩৫টি পর্যটকবাহি গাড়ি সাজেকে এসেছে।

    খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, এরমধ্যে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হবে এবং যথা সময়ে ১৪৪ ধারাও তুলে নেওয়া হবে। সহিংস পরিস্থিতির কারণে পর্যটন শিল্পের অনেক ক্ষতি হয়। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে পর্যটকের আগমনও আগের মতোই বাড়বে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    বানারীপাড়ায় কৃষকদল নেতা হত্যা মামলায় জামায়াত নেতাদের আসামী করায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

    রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি: বরিশালের বানারীপাড়ায় উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ (৫৫) হত্যা মামলায় মসজিদের...