More

    অক্টোবরেই বরিশালবাসীর আবেগের স্টিমার ফিরছে

    অবশ্যই পরুন

    ঢাকা থেকে বরিশাল নৌপথে চলতি মাসেই চালু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী স্টিমার সার্ভিস। গত মে মাসে স্টিমার চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এ জন্য ‘পিএস মাহসুদ’ নামের একটি স্টিমার সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। এখন অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার কাজ চলছে। সার্ভে, ফিটনেস রিপোর্টসহ অন্যান্য আইনগত প্রক্রিয়া যাচাই করে চলতি মাসের যেকোনো দিন স্টিমারটি চালু হতে পারে।

    বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা জানান, শত বছরের পুরোনো হওয়ায় স্টিমারটির শক্তি এখন আর আগের মতো নেই। ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে অন্যান্য বেসরকারি লঞ্চের যেখানে আট ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে স্টিমারটির গন্তব্যে পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা বেশি সময় লাগতে পারে।

    ব্যয় ও যাত্রী বিবেচনায় স্টিমারটিকে পর্যটক সার্ভিস হিসেবে সপ্তাহে একদিন ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচল করবে। এ ক্ষেত্রে শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে বিকেলে বরিশালে পৌঁছাবে। আবার ফিরতি যাত্রায় ঢাকায় ফিরবে। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশে প্রমোদভ্রমণের জন্য স্টিমারটি ভাড়া নেওয়া যাবে।

    দেড় শ বছরের ঐতিহ্য
    নদীবিধৌত বরিশাল জনপদের জলযাত্রার ইতিহাসের কেন্দ্রে ছিল স্টিমার। একসময় স্টিমার ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের মানুষের যাত্রা কল্পনা করা যেত না। ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর স্টিমারসেবা বন্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে দেড় শ বছরের ঐতিহ্য থেমে যায় নীরবে, অবহেলায়। গত মে মাসে বরিশাল সফরকালে সেই ইতিহাস আবার ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন। এর পর থেকে বরিশালবাসী অধীর আগ্রহে ঐতিহ্যবাহী এই জলযান চালুর অপেক্ষা করছেন।

    সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে ১৮৮৪ সালে স্টিমারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। কয়লাচালিত প্যাডেল স্টিমার প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ও পরে ঢাকা থেকে খুলনার নৌপথে চলাচল করত। পথে চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, মোরেলগঞ্জ, হুলারহাট, সন্ন্যাসী, কাউখালী ঘাটে যাত্রাবিরতি দিত। ঔপনিবেশিক সময়ে খুলনার সঙ্গে ভারতের রেল যোগাযোগ শুরু হলে নৌপথে যাত্রী পরিবহন গুরুত্ব পায়। তখন বহরে ছিল ফ্লোটিলা কোম্পানির ১৪টি স্টিমার। পরে পিএস গাজী, পিএস অস্ট্রিচ, পিএস মাহসুদ, পিএস লেপচা, পিএস টার্ন, পিএস সেলার মতো ঐতিহ্যবাহী স্টিমারের সংযোজন ঘটে।

    বরিশালবাসীর কাছে স্টিমার শুধু যান ছিল না, ছিল নির্ভরতার প্রতীক। ঝড়বৃষ্টি, জোয়ার-ভাটা পেরিয়ে স্টিমার আপন গন্তব্যে পৌঁছে দিত যাত্রীদের। ছিল নিরাপদ ও আরামদায়ক। শতবর্ষ ধরে সেবা দেওয়া স্টিমারগুলো পর্যটকদের কাছেও ছিল আকর্ষণীয় এক অভিজ্ঞতা। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে বাস্তবতা পাল্টে যায়। পদ্মা সেতু চালু, সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন, লঞ্চমালিকদের দৌরাত্ম্য, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মতো নানা কারণে চাপে পড়ে এই সেবা।

    ২০১৯ সাল থেকে চলাচল সীমিত
    যাত্রী ও নাব্যতা-সংকটে ২০১৯ সাল থেকে স্টিমার চলাচল সীমিত হয়ে যায়। খুলনার বদলে যাত্রা থেমে যায় মোরেলগঞ্জে। সর্বশেষ এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙ্গালি সপ্তাহে চার দিন ঢাকা-মোরেলগঞ্জ নৌপথে চলাচল করলেও শেষ যাত্রাটি ছিল ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। এখন নতুন করে সপ্তাহে একদিন স্টিমার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও সপ্তাহের প্রতিদিনই চালুর দাবি উঠেছে।

    বরিশাল যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ বলেন, ব্রিটিশ আমলের প্রযুক্তিগত এই বিস্ময় সভ্যতার চিহ্ন। জীবন্ত ইতিহাসের অংশ করে রাখতে স্টিমারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে বড় ঢাকা-বরিশাল নৌপথে বেসরকারি লঞ্চগুলোর সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি যাত্রীরা। এই জিম্মিদশা কাটাতে প্রতিদিন অন্তত একটি স্টিমার চলাচল করার দাবি জানান তিনি।

    সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। শনিবার বিকেলে বরিশাল সার্কিট হাউসে বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান রোববার দুপুরে বলেন, চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিনে দুটি স্টিমারের পুনর্বাসনকাজ শেষ হয়েছে।

    ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে পানিতে চালানো হয়েছে। সাজসজ্জার কিছু কাজ বাকি, এখন সেগুলো চলছে। এরপর সার্ভেসহ অন্যান্য আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করে অক্টোবরের মধ্যে একটি স্টিমার ঢাকা-বরিশাল নৌপথে পর্যটক সার্ভিস হিসেবে যুক্ত হবে। তিনি বলেন, আপাতত একটি স্টিমার সপ্তাহে এক দিন চলাচল করবে। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশে কেউ ভাড়া নিয়ে ভ্রমণ করতে চাইলে সেই সুযোগ রাখা হবে।

    প্রতিদিন চালুর দাবির বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, শত বছরের পুরোনো স্টিমারগুলো এখন অনেকটা শক্তিহীন। মেরামত করে পরিচালনার উদ্যোগ নিলেও আগের শক্তিতে ফিরতে পারবে না। তা ছাড়া এসব স্টিমারে যাত্রা সময়সাপেক্ষ। যাত্রীদের অবারিত সময় না থাকলে স্টিমারে উঠতে চাইবেন না। ব্যয় পোষানোও অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে আবেগ নয়, বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    ঝালকাঠিতে সাকুরা পরিবহনের বাসে অগ্নিকাণ্ড, দগ্ধ মোটরসাইকেল আরোহী

    মো. মাহিন খান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি–বরিশাল মহাসড়কের প্রতাপ এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিকেলে ঢাকাগামী...