১৮ বছর বয়সে লর্ডসে অভিষেক থেকে ৩৮ পেরিয়ে ঘরের মাঠে শততম টেস্টে শতক হাকানো। চাইলেও হয়তো এর থেকে ভালো চিত্রনাট্য লেখা সম্ভব নয়। বিকেএসপির পাতলা গড়নের কিশোর থেকে বাংলাদেশের মিস্টার টেস্ট ক্রিকেট হওয়ার পথটা সুগম করেছেন মুশি তার পরিশ্রম, সাধনা আর একাগ্রতা দিয়ে। নিজেকে নিয়ে বসিয়েছেন ইনজামামুল-রিকি পন্টিংদের পাশে।
‘এজিং লাইক আ ফাইন ওয়াইন’ শব্দটা খুব সম্ভবত মুশফিককে সবথেকে ভালো সংজ্ঞায়িত করতে পারবে। নিজের ৫০তম টেস্টের মাইলফলকটাও স্পর্শ করেছিলেন এই মিরপুরে। হোম অব ক্রিকেটে সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই দুই ইনিংসে করতে পেরেছিলেন মোট ১৩ রান। টেস্টে ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরি পার করেছিলেন মুশফিক ২০১৬ তে। তখন রান ছিল ২৭৪০, গড়টা ছিল ৩১-৩২ এর কোটায়, সেঞ্চুরি ছিল মাত্র ৩টা, ফিফটি ছিল ১৫টা।
শেষ ৫০ টেস্টে মুশি রান করেছেন ৩৭০৭। ১২ ফিফটির বিপরীতে করেছেন ১০ সেঞ্চুরি। এভারেজটাও এখন ৪০ ছুঁইছুঁই। ক্রিকেটের প্রায় দেড়শ বছরের ইতিহাসে শততম টেস্টই খেলেছেন মোটে ৮৪ জন। তার মধ্যে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ছেন মাত্র ১১ জন। মুশি এখন সেই এলিটদের ও এলিট লিস্টে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন।
২০ বছরের প্রতীক্ষা, সংগ্রাম আর অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে মুশফিক একজন ব্যাটার বা অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রায় সব রেকর্ডের শীর্ষেই নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছেন। দুই দশকের এই ক্যারিয়ারে মুশফিক টেস্ট ম্যাচ মিস করেছেন মতানুসারে ১৯ কিংবা ২০টি। অর্থাৎ বছর প্রতিটা মাত্র একটা!
হার্ডওর্য়াক ট্যালেন্টকে বিট করে এটা সত্য। তবে তার থেকেও ভয়ানক সত্যিটা হচ্ছে পরিশ্রম মেধাকে আরও শানিত করে। মুশফিক তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। মেধা মুশফিকের ছিলই, তবে সব থেকে বেশি যেটি ছিল সেটি হল তার ডেডিকেশন, প্যাশন আর পিউর হাঙ্গার। নাহলে ৩৯ ছুঁইছুঁই মুশি এখনো সবার আগে অনুশীলনে আসতেন না।
দীর্ঘ ২০ বছরে হাসি, কান্না, আলোচনা, সমালোচনা, উত্থানপতন সবই দেখেছেন মুশফিক। ১৫৬ টেস্ট খেলা বাংলাদেশের হয়ে মুশিই মাঠে নেমেছে ১০০ ম্যাচে। বগুড়ার মিতু থেকে মিস্টার টেস্ট ক্রিকেট অব বাংলাদেশ হওয়ার জার্নিটা সহজ ছিল না মোটেও। তবে মুশফিক পেরেছেন, মুশফিককে পারতেই হত। তার পরিশ্রম আর অগাধ বিশ্বাসকে দূরে কিভাবে ঠেলে দিতেন সৃষ্টিকর্তা!
