বরিশাল মেট্রোপলিটন বিমানবন্দর থানা পুলিশ তদন্তের কথা বলে ডেকে নিয়েছিল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন শিকদার ওরফে লিটুকে (৩২)। অভিযোগ উঠেছে, তখন পুলিশের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।এই ঘটনার পর নিহত লিটুর বোন মুন্নি আক্তার বাদী হয়ে এয়ারপোর্ট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তবে মামলার তদন্তে থানা পুলিশের কার্যকর ভূমিকা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুন্নি আক্তার অভিযোগ করেন, মামলার আসামিরা বর্তমানে তাকে ও তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভাই সুমন সিকদার। সেখানে আরও অভিযোগ করা হয়, লিটুকে প্রকাশ্যে হত্যার পাশাপাশি অভিযুক্তরা তাদের বসতঘর ভাঙচুর করে এবং অগ্নিসংযোগ করে।
লিটুকে বাঁচাতে গিয়ে তার ভাই-বোন ও মা গুরুতর আহত হয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়েছেন। এখন জামিনে থাকা কিছু আসামি বাদীসহ নিহত লিটুর পরিবারকে খুন ও গুমের হুমকি দিচ্ছে, যার কারণে তারা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, এই মামলার তদন্ত সিআইডির মাধ্যমে করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, থানা পুলিশের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ এবং তারা শুরু থেকেই আসামিদের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে।
এখন পর্যন্ত যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন, বিমানবন্দর থানা পুলিশের কোনো দৃশ্যমান ভূমিকা নেই। লিটু হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা ঘটনার পর প্রায় এক সপ্তাহ নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করলেও থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি। ঘটনার সময় এয়ারপোর্ট থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন শিকদারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা মেলেনি। অভিযোগ ওঠে, পুলিশ সেদিন তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে হয়তো হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেত।
তবে ঘটনার পর ওসি জাকির হোসেন শিকদার গণমাধ্যমে বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল না এবং আইন অনুযায়ী তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। থানা পুলিশের বর্তমান ওসি আল মামুন উল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত ১১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৫০ জন হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। হুমকির বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পারিবারিক বিরোধের জেরে চলতি বছরের ৩১ জুলাই বরিশাল নগরীর কাশিপুর ইউনিয়নের পূর্ব বিল্ববাড়ি এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরদিন, ১ আগস্ট মুন্নি আক্তার বাদী হয়ে ৬১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে এয়ারপোর্ট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।