More

    বাজারে দাম বাড়ানোর পর পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা

    অবশ্যই পরুন

    দেশে পেঁয়াজের দাম কমতির দিকে। বাজারে এখন মানভেদে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে আসছে ভরা মৌসুম। তখন দাম আরও কমার কথা। এই সময়েই একদল আমদানিকারক ভারত থেকে পেঁয়াজ আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা সিন্ডিকেট করে দেশের বাজারে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে আমদানির সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছেন।

    কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এখন দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই, বরং পর্যাপ্ত মজুত আছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি। তবু কিছু ব্যবসায়ী আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) পাওয়ার জন্য মরিয়া। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ে জমা পড়েছে ২ হাজার ৮০০ আবেদন। অথচ আগামী দুই মাস পরই উঠবে দেশীয় পেঁয়াজ, যা বাজারে আরও সরবরাহ বাড়াবে।

    কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুর রহমান বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ নভেম্বরেই বাজারে আসবে। এখন আমদানির অনুমতি দিলে কৃষক বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন। কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য। আলুর মতো পেঁয়াজের দরপতন আমরা হতে দেব না।

    বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, গত মৌসুমে কৃষকরা ন্যায্য দাম না পেয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করে ফেলেছেন। ফলে এখন তাদের হাতে তেমন কিছু নেই। মজুতদারদের দখলে চলে গেছে পেঁয়াজ। এই সুযোগে মজুতদাররা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজ আটকে রেখে দাম বাড়িয়েছিল। একই সঙ্গে দাম বাড়ার অজুহাত তুলে ভারত থেকে আমদানির জন্য সরকারকে চাপ দিতে থাকে।

    একজন আড়তদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যখনই ভারতে পেঁয়াজের দাম কমে, তখন কিছু ব্যবসায়ী দেশে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে তোলে। দামের অজুহাতে ভারত থেকে কম দামে আমদানি করে বাংলাদেশে বেশি দামে বিক্রি করে। সরকার যদি আমদানির অনুমতি দেয়, ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হন।

    সরকারি হিসাবে, দেশে বছরে ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এবার উৎপাদন ও সংরক্ষণ দুইই ভালো। এমন অবস্থায় নতুন করে আমদানির প্রয়োজন নেই। গত এপ্রিলে দাম কিছুটা বাড়লে বাণিজ্য উপদেষ্টার পরামর্শে কৃষি মন্ত্রণালয় সীমিত আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। পরে দাম কমে গেলে নতুন কোনো আইপি দেওয়া হয়নি। এরপরও ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের সঙ্গে যোগসাজশে আইপি ছাড়া এলসি খুলে পেঁয়াজ বাংলাদেশে নিয়ে আসছেন। এখন অনেক পেঁয়াজ বন্দরে পড়ে আছে। আইপি না থাকায় এগুলো আটকে দেওয়া হয়েছে।

    কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায়, ভারতে যেসব পেঁয়াজ ২০ রুপি কেজি দরে কেনা হয়, কাগজে তার দাম দেখানো হয় ৩০ রুপি। এতে টাকা পাচার হয়। এমনকি কিছু ব্যবসায়ী পেঁয়াজের চালানে অন্য অবৈধ পণ্যও ঢুকিয়ে দেন। ভারতের একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশে এটি করা হয়।

    সূত্রটি আরও জানায়, এভাবে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ব্যাংককে বিভ্রান্ত করে এলসি খুলে ফেলেছেন। তারা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, আইপি শিগগিরই পেয়ে যাবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর স্পষ্ট জানিয়েছে, বর্তমানে নতুন কোনো আইপি দেওয়া হচ্ছে না। তারা এলসি খুলে পেঁয়াজ বন্দরে এনে এখন সরকারকে চাপ দিচ্ছেন। অথচ তাদের আইপি নেই।
    আইপি না পেয়ে ব্যবসায়ীরা হাইকোর্টে ১৪টি রিট করেন। এর মধ্যে ৮টি ইতোমধ্যে আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। রিটে ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল, আবেদন করার পরও কেন অনুমতি দেওয়া হলো না, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।

    পেঁয়াজ আমদানিকারক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘আইপির জন্য আবেদন করেছি অনেক আগে। নিয়ম অনুযায়ী এক সপ্তাহের মধ্যে অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কয়েক মাস পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে জানিয়েছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কারণ অনেক ব্যবসায়ী এলসি খুলে পেঁয়াজ বন্দরে নিয়ে এসেছেন। এখন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে না।’

    কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আইপি দেওয়ার ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হাতে। বাজার পরিস্থিতি, কৃষকের স্বার্থ ও উৎপাদন পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
    এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানির বিষয় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় অনুমতি না দিলে আইপি দেওয়া যায় না। পেঁয়াজ আমদানির জন্য ২ হাজার ৮০০-এর বেশি আবেদন পড়েছে। আমরা সব আবেদন ফেরত দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের মতামত নিতে কিছুটা সময় লেগেছে।’
    উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা পেঁয়াজের কোনো আইপি অনুমোদন করিনি।’

    শঙ্কায় কৃষক
    গত বছর দাম না পেয়ে অনেক কৃষক আত্মহত্যাও করেছেন। এবার ফলন ভালো হয়েছে, তাই তাঁরা দাম পাওয়ার আশায় আছেন। ভরা মৌসুমের আগে যদি ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে ঢুকে যায়, তাহলে কৃষক আবারও ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। পাবনার চাটমোহরের কৃষক রহমত আলী বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে ফসল তুলছি, খরচ গেছে কেজিতে ৪০ টাকা। এখন যদি ভারতীয় পেঁয়াজ আসে, তাহলে আমাদের ফসল বিক্রি হবে না। সরকার আমদানি বন্ধ না করলে আমরা টিকতে পারব না।’

    দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের মাঝে ৫০ টন উন্নতমানের পেঁয়াজ বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে ডিএপি ও এমওপি সার। এবার ৮ হাজার ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’ স্থাপন করা হয়েছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণে সাহায্য করছে। এবার উৎপাদিত পেঁয়াজ নভেম্বরেই বাজারে আসবে।
    কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দুই দিকেই ভারসাম্য রাখা–কৃষক যেন লাভবান হন, আর ভোক্তাও যেন ন্যায্যমূল্যে পণ্য পান। তাই এখন আমদানি স্থগিতই যুক্তিযুক্ত।’

    কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে। তারা পেঁয়াজ কিনে মজুত করছে, বাজারে ছাড়ে না। দেশে ভালো উৎপাদন হলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানির পাঁয়তারা করা হয়। সরকারের নজরদারি না বাড়ালে বাজারে এই সিন্ডিকেট আবারও সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলবে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    কালকিনিতে পুলিশের উপর হামলাসহ দুটি মামলায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

    মাদারীপুর প্রতিনিধি: নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ সরদার ওরফে লিখন (৩০)-কে...