More

    বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য

    অবশ্যই পরুন

    সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিচালিত জনপ্রিয় ফেসবুকপেজ ‘লিংকার্স ইন বরিশাল ইউনিভার্সিটি’-এ গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) একটি পুরনো রাজনৈতিক প্রোগ্রামের ভিডিও পুনরায় আপলোড হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভিডিওটি মূলত ২০২৫ সালের ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তনখোলা হলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় টিম কর্তৃক সদস্য ফরম বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মী সম্মেলন থেকে ধারণ করা হয়েছিল।

    ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রদল কর্মী আরিফ হোসাইন শান্তর নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মী একাডেমিক ভবনের ভেতরে স্লোগান দিচ্ছেন। ভিডিওটি পুনঃপ্রকাশের পর মন্তব্যে একজন নারী রাজনৈতিক কর্মীকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ব্যাপক নিন্দা ও প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। ভুক্তভোগী ছাত্রদল নেত্রী মরিয়ম খাতুন, যিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

    তিনি বলেন “জুলাই আন্দোলনের মতো এক ঐতিহাসিক ঘটনার পরও এমন নিন্দনীয় আচরণ দেখা সত্যিই হতাশাজনক। ভাবিনি, নতুন বাংলাদেশের পথে হাঁটতে গিয়ে এখনো নারী নেতৃত্বকে হেয় করার মানসিকতা এত গভীর হতে পারে। ঘটনার পর ছেলেটার বিরুদ্ধে আরিফ হোসাইন শান্ত ভাই বাদী হয়ে আমাকে সাক্ষী করে বন্দর থানায় একটি জিডি করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, এর ন্যায্য তদন্ত ও বিচার হলে ভবিষ্যতে কেউ আর কোনো নারী নেতৃত্বকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার সাহস দেখাবে না। আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, চুপ করে থাকবেন না।

    কেউ যদি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়, প্রতিবাদ করুন এবং আইনগত ব্যবস্থা নিন। নারী নেতৃত্বকে অপমান করা মানে আমাদের অগ্রযাত্রা ও গণতন্ত্রের চেতনাকে আঘাত করা।” অভিযুক্ত মন্তব্যকারী আর এইচ আরিফ, যিনি বর্তমানে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিরত অবস্থায় আছেন। তিনি জানান,“ভিডিওর মন্তব্যে আমার যে বক্তব্যটি দেওয়া হয়েছিল, সেটি কোনো ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে নয়। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বেশকিছু নেতিবাচক সংবাদ দেখে আমি সংগঠনকে উদ্দেশ্য করেই মন্তব্যটি করেছিলাম, যা পরবর্তীতে অনেকের নজরে আসে।

    আমি বুঝতে পারিনি যে মন্তব্যটি কারও ব্যক্তিগত মর্যাদাকে আঘাত করতে পারে। কমেন্ট করার কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারি, এটি অনুপযুক্ত ও কুরুচিপূর্ণ ছিল, তাই আমি সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্যটি মুছে ফেলি। এ ঘটনায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও অনুতপ্ত। আমি কাউকে আঘাত করতে চাইনি, কিন্তু এখন মন্তব্যটির কারণে নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি। আমি সবার কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে ভবিষ্যতে এমন কোনো আচরণ আর কখনো করব না।” তিনি আরও বলেন, “রাজনীতি হোক মতের ভিন্নতায়, কিন্তু অপমান বা বিদ্বেষে নয়।

    কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনকেই উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা সঠিক নয়।” ছাত্রদলের নারী কর্মী সায়েদা মাহিমা মুনা বলেন, “রাজনীতিতে সক্রিয় নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, এটি নারী নেতৃত্ব, গণতন্ত্র ও সভ্যতার মূলচেতনাকে আঘাত করে। যারা নারীর নেতৃত্বে ভয় পায়, তারাই এমন নিচুমানের মন্তব্য করে নিজেদের মানসিক দারিদ্র্য প্রকাশ করে। আমরা এমন এক ক্যাম্পাস চাই যেখানে রাজনীতি হবে যুক্তি, নৈতিকতা ও আদর্শের ভিত্তিতে—কুরুচি নয়, বিদ্বেষ নয়।” বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন ছাত্রদলের সাবেক সদস্য আরিফ হোসাইন শান্ত বলেন, “বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নেত্রীকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে করা অশালীন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।

    প্রায় ১০১ দিন আগের (২৯ জুলাই) কর্মীসভার ভিডিওকে ঘিরে পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে,যা উদ্দেশ্যমূলক ও নারী বিদ্বেষী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নারীর মর্যাদা, সম্মান ও নিরাপত্তার পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছে।” একাডেমিক ভবনে স্লোগানের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন,”সেদিন(২৯ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা চলছিল না, এবং অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

    ” ছাত্রদলকর্মী ইত্তেসাফ-আর-রাফি বলেন, “একজন নারী শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, এটি নারী নেতৃত্ব ও গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং সকলকে স্পষ্ট করে জানাতে চাই যে নারীর প্রতি অসম্মান কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।” আরেক কর্মী টি. এইচ. সাকিব বলেন, “আমরা এমন এক যুগে আছি যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় মেয়েদের নিয়ে সহজেই কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

    এই ধরনের সাইবার বুলিং প্রতিহত করা প্রতিটি সুনাগরিকের দায়িত্ব।” ঘটনাটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং এটি বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক মানসিকতার প্রতিফলন বলেই মনে করছেন অনেকেই। এই ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলেছে যে রাজনীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা কতটা মানবিক থাকতে পারছি?

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর সুপারিশ

    আবারও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। লিটারপ্রতি সয়াবিনের দাম ৯ টাকা ২৭ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ...