More

    শেখ হাসিনার রায় ঘিরে মাঠে নামার চেষ্টায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগ

    অবশ্যই পরুন

    ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধান শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন নেতার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে মাঠে নামার চেষ্টা করছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। দলটির ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি নিয়ে ইতোমধ্যে দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

    গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে বিদেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় ১০ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিক্ষোভ এবং ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচির পক্ষে অনলাইনসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়ে উঠেছেন আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এরপর থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে, যা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন যে, ওই দিন ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।

    গত এক বছরেরও বেশি সময় আত্মগোপনে থাকা ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আদালতে শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে রাজপথে নামা এবং ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বলে দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

    গত বছর জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় কবে দেওয়া হবে, তা ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বরেণ্য ওই ট্রাইব্যুনাল গত ২৩ অক্টোবর এ তথ্য জানিয়েছিল।

    আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র জানায়, দলটির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে এ কর্মসূচি নিয়ে কথা বলছেন। দলের সিনিয়র ও দায়িত্বশীল নেতারাও এ বিষয়ে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং কাজ করছেন।

    বর্তমানে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী আরাফাত এক বিদেশি গণমাধ্যমকে বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই এ লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীকে তা সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ কর্মসূচি সফল করবে। ঢাকাকে পুরো বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।

    এদিকে এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। গত সোমবার (১০ নভেম্বর) ঢাকায় বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের কয়েকটি ঘটনা ঘটে। পরদিন মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ের সামনেও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলোর জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগই এই নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে।

    এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে সরকার সতর্ক রয়েছে। কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না।

    তবে আওয়ামী লীগ নেতারা এসব ঘটনার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সুযোগ নিয়ে সরকারের প্রশ্রয় পাওয়া সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো এ ধরনের নাশকতা ঘটাতে পারে। আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করবে বলে আত্মগোপনে ও বিদেশে অবস্থানরত দলটির নেতারা জানিয়েছেন।

    এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, জনপ্রিয় দল হিসেবে আমরা জনমতকে শ্রদ্ধা করি। কথিত আদালতের নামে শেখ হাসিনাকে সাজা দেওয়ার নাটক সৃষ্টি করেছে সরকার। লকডাউন কর্মসূচির মাধ্যমে সেই জনমতেরই প্রতিফলন ঘটবে।

    গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। ওই দিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে টানা প্রায় দেড় দশক ক্ষমতায় থাকা সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরও পতন ঘটে। পদত্যাগের পর দ্রুত দেশত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। এখনও তিনি সেদেশেই অবস্থান করছেন।

    সরকার পতনের দিনই আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাও আত্মরক্ষার্থে আত্মগোপনে চলে যান। শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেই সেদিন বা পরদিনই দেশত্যাগ করেন। আবার কেউ কেউ আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ও পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ৫ আগস্টের আগেই দেশ ছাড়েন। এর ফলে ৫ আগস্টেই দলটি কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে।

    সরকার পতনের পর দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্র থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অধিকাংশ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক বছর তিন মাস পরও আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী।

    গত বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, উসকানিমূলক মিছিল আয়োজন, রাষ্ট্রবিরোধী লিফলেট বিতরণ এবং বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ অন্য নেতাকর্মীদের দ্বারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধমূলক ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, ব্যক্তি ও প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের প্রচেষ্টাসহ আইন-শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে।

    অতীতের এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ চলছে। বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গত ১২ মে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। এই অবস্থায় দলটি এখনও কার্যক্রম নিষিদ্ধই রয়েছে।

    তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, গত এক বছরে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিয়মিতভাবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তাদের সমস্যার খোঁজ নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সারা দেশের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি নিয়েও শেখ হাসিনা দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।

    এ বিষয়ে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের এক নেতা অজ্ঞাত স্থান থেকে জানান, “ঢাকা লকডাউন সফল করতে নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা ব্যাপক সংখ্যায় রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিষিদ্ধ করে, মামলা করে, জেলে দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখা যাবে না।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    নেছারাবাদে ইউএনও’র বিতর্কিত প্রকল্প: মাঠ দখল করে স্কুল স্থাপনের নামে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন

    নিজস্ব প্রতিবেদক: নেছারাবাদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম শামীমের বিরুদ্ধে খেলার মাঠ দখল করে স্কুল স্থাপনের নামে...