নিজস্ব প্রতিবেদক: নেছারাবাদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম শামীমের বিরুদ্ধে খেলার মাঠ দখল করে স্কুল স্থাপনের নামে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত সরকারি খাস জমিতে নির্মিত “নেছারাবাদ আইডিয়াল ইনস্টিটিউট” নামে একটি প্রাইমারি স্কুলের পেছনে এই বিতর্কের সূত্রপাত। অভিযোগ রয়েছে, ইউএনও ওই প্রকল্পের নামে স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিকদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, ইট ও কাঠসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। অথচ এ মাঠটি ছিল নেছারাবাদ স্টেডিয়াম, যা উদ্বোধন করেছিলেন প্রয়াত বিএনপি নেতা ও সাবেক হুইপ মো. শহিদুল হক জামাল।

স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন—উপজেলায় ইতোমধ্যেই ১৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও নতুন একটি স্কুল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা কী?
সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ ইউএনও পদে যোগদানের পর থেকেই জাহিদুল ইসলাম শামীম একাধিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি “সুশিক্ষার মানোন্নয়ন” শীর্ষক উদ্যোগের কথা বলে তিনি উপজেলার একমাত্র স্টেডিয়াম মাঠে টিনশেড ঘর তুলে দেন, যা এখন স্থানীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
অভিযোগ রয়েছে, ওই স্কুলের জন্য ইউএনও স্থানীয়ভাবে ৮টি ইটভাটা থেকে ৪০ হাজার ইট (মূল্য প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা) বিনামূল্যে সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া উপজেলার ১৪টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়, যার মোট পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নির্মাণে ব্যবহৃত কাঠের বড় অংশ নাকি বনবিভাগের জব্দকৃত গাছ থেকে নেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আবেদ আলী প্রাইভেট হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন,
“ইউএনও স্যার আমাদের সভায় ডেকে বলেন, স্কুলের জন্য সহযোগিতা করতে হবে। আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। না দিলে হয়তো সমস্যা হতো।”
জাহানারা হাসপাতালের পরিচালক মো. রুহুল আমিন বলেন,
“স্যার স্কুলের জন্য সবার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। আমি ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। না দিলে সরকারি দিক থেকে বিপাকে পড়তাম।”
আশা ব্রিকসের পরিচালক মো. অলি হাসান জানান,
“স্যার আমাদের ভাটায় ডেকে পাঁচ হাজার করে ইট চেয়েছিলেন। আমি আট হাজার ইট দিয়েছি।”
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইবিসি ব্রিকসের মালিক মো. আবুল কালাম বলেন,
“সব ভাটা থেকেই ইট নিয়েছেন। শুনেছি বাজার কমিটির কাছ থেকেও ৭৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।”
বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক কাজী আনিসুজ্জামান জানান,
“স্যার স্কুল করছেন, এজন্য সমিতির পক্ষ থেকে ৭৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছি।”
স্থানীয় সমাজকর্মীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“১৬৯টি স্কুল থাকা সত্ত্বেও নতুন স্কুলের প্রয়োজন ছিল না। মাঠ দখল করে সহযোগিতার নামে অর্থ তোলা অনৈতিক ও প্রশ্নবিদ্ধ।”
এ বিষয়ে ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলাম শামীম বলেন,
“সুশিক্ষার মান উন্নয়নে আমি স্কুল করার উদ্যোগ নিয়েছি। সবাই সাড়া দিয়েছে, কিছু সহযোগিতা করেছে।”
তবে কী পরিমাণ সহযোগিতা সংগ্রহ করা হয়েছে—এই প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
