ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার ৩ নম্বর পূর্ব সাতুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে উন্নয়নবঞ্চিত। বিদ্যালয়টি দুই বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও বিকল্প ভবন না থাকায় আজও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান। ছাদে ফাটল, দেয়ালে পলেস্তারা খসে পড়া, সামান্য বৃষ্টিতেই চুঁইয়ে পানি পড়া—সব মিলিয়ে অস্বাস্থ্যকর ও ভয়াবহ পরিবেশে প্রতিদিন ক্লাস করছে কোমলমতি শিশুরা।
সরেজমিনে গিয়ে বিদ্যালয় সূত্র ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়টি ১৯৪৩ সালে টিন ও কাঠের ঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯৯৩ সালে চার কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মিত হয়। কিন্তু ২০২২ সালে উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। পরবর্তী সময়ে কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় সেই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রম। চারটি কক্ষের মধ্যে দুটি সম্পূর্ণ অনুপযোগী। বাকি দুটি কক্ষে কাপড়ের পর্দা টাঙিয়ে একাধিক ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
জায়গা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীকে বাইরে অপেক্ষা করতে হয়। বিদ্যালয়ে নেই গাইড ওয়াল, নেই খেলার মাঠ—সব মিলিয়ে সম্পূর্ণ অনুপযোগী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী নাফিসা জানায়, তারা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে; কখন কী ঘটে যায় সেই আতঙ্ক সবসময়ই কাজ করে। সায়েম জমাদ্দার বলছে, বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে পানি পড়ে এবং দেয়ালের পলেস্তারা ঝরে পড়ে।
খেলার মাঠ না থাকায় খেলাধুলাও করতে পারে না তারা। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মালতী মণ্ডল জানায়, শিক্ষকদের লাইব্রেরির পাশে টয়লেট থাকায় তারা বাধ্য হয়ে নোংরা বাইরের টয়লেট ব্যবহার করে; এতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অভিভাবক মাসুম বিল্লাহ বলেন, বিদ্যালয়ের অবস্থা না দেখলে বোঝা যাবে না কী ভয়াবহ পরিবেশে শিশুরা পড়ালেখা করছে। স্থানীয় যুবক নিয়াজ আকন বলেন, বিদ্যালয়টি অবহেলিত হওয়ায় শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নেই; ফলে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে।
ব্যবসায়ী মোজাম্মেল তালুকদার বলেন, অন্য বিদ্যালয়ে আধুনিক ভবন, বাউন্ডারি ওয়াল ও খেলার সরঞ্জাম থাকলেও এখানে নেই কিছুই। বিদ্যালয়ের পাশের ইটভাঙা খারাপ রাস্তা যাতায়াতকে আরও দুর্বিষহ করেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, ১৯৯৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমরের বরাদ্দে ভবনটি নির্মাণ হয়।
ভবনটি অনুপযোগী হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে বরাদ্দের জন্য আবেদন করলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। সাতজন শিক্ষক ও ১৪০ শিক্ষার্থী নিয়ে মানবেতর পরিবেশে পাঠদান চলছে। তিনি জানান, বিদ্যালয়ের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি নতুন ভবন, বাউন্ডারি ওয়াল এবং খেলার মাঠের উন্নয়ন প্রয়োজন। সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হেমায়েত উদ্দিন নুরু মিয়া বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিদ্যালয়টি উন্নয়নের বাইরে রাখা হয়েছে।
বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও সুফল পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ মিললে দ্রুত উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করা হবে। রাজাপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী খায়রুল ইসলামও স্বীকার করেছেন, সমস্যা সম্পর্কে জানানো হয়েছে; তাদের পক্ষে এর বেশি কিছু করার নেই।
