দাবি ছিল চাকরিচ্যুত প্রতিজন শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ বাবদ দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা করে। জেলা প্রশাসকের সামনে দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি ভেঙে কোম্পানি থেকে দেওয়া হয় মাত্র সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে। সেই ক্ষোভে ওষুধ কোম্পানির দুটি স্টাফ বাস ভাঙচুর করেছেন চাকরিচ্যুত বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাতে সাড়ে ৯টার দিকে বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডে অপসো স্যালাইন ফার্মার কারখানার সামনে এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন প্রতিষ্ঠানটির চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা। শ্রমিকদের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরীন ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়ক ও সদর আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী।
এর আগে, টানা ২২ দিন আন্দোলনের পর গত ২০ নভেম্বর রাতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বরিশালের নবাগত জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম সুমনের আহ্বানে তিন শর্তে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেন শ্রমিকরা। শর্তগুলো ছিলো অপসো স্যালাইন (ওএসএল) ফার্মার নির্মাণাধীন জাগুয়া প্লান্টে পরবর্তী নিয়োগে ছাঁটাইকৃতদের মধ্য থেকেই নিয়োগ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে চাকরির বয়স শিথিলযোগ্য করা, বেতনস্কেলের বকেয়া টাকা ও সমুদয় পাওনাদি একত্রে পরিশোধ করা এবং মানবিক দিক বিবেচনায় মালিকপক্ষ কিছু বাড়তি ক্ষতিপূরণ দেবেন। সে ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা করে দাবি ছিল শ্রমিকদের।
আন্দোলনরত চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা জানান, অপসোনিন ফার্মা মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার একটাও পূরণ করেনি। আমরা যেখানে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি সেখানে তারা মাত্র ৩ হাজার টাকা দিতে চাচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং অমানবিক। এজন্য শ্রমিকরা ক্ষোভে কোম্পানি থেকে বের হয়ে দুটি স্টাফ বাস ভাঙচুর এবং পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেওয়া বাসদ বরিশাল জেলার সমন্বয়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে শ্রমিকরা ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল।
কিন্তু অপসোনিন ফার্মা মালিক পক্ষ তা না মেনে ৩ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা বলেন। শ্রমিকরা সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করলে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১ ডিসেম্বর বাড়তি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মালিকপক্ষ ২১ ডিসেম্বর ৫০০ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে চাইলে শ্রমিকরা প্রত্যাখ্যান করে।
এমনকি ক্ষতিপূরণের জন্য শ্রমিকরা প্রয়োজনে আইনি সহায়তা নিবেন। অপসোনিন ফার্মার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার অনিন্দ্য কুমার বলেন, আমরা আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের ১২০ দিনের বেতন, গ্র্যাচুয়েটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড শ্রমিকদের বুঝিয়ে দিয়েছি। এখন তারা যে দাবি করছে সেটা অযৌক্তিক। আইনের বাইরে গিয়ে তারা এমন দাবি করতে পারে না।
শ্রমিকরা মামলা করলে সেটা আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর দুপুরে অপসোনিন ফার্মিসিটিক্যাল কোম্পানির স্টোরিপ্যক বিভাগের ৫৭০ শ্রমিকের চাকরি অবসানের চিঠি দেয় মালিকপক্ষ। ওইদিন থেকেই চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা। বগুড়া রোডে কারখানার সামনে প্রধান ফটক আটকে অবরোধ, বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণে বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন।
এছাড়াও বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ, ভুখা মিছিলসহ গত ২২ দিনে নানা কর্মসূচি পালন করেন তারা। সবশেষ গত ১৮ নভেম্বর থেকে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের বিপক্ষে পাল্টা আন্দোলন শুরু করেন বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকরা। দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি আন্দোলনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় আন্দোলন স্থগিত এবং কোম্পানির উৎপাদন শুরু হয়েছিল।
