বরিশালের বানারীপাড়ায় মানব ধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর জন্ম বার্ষিকীতে কেন্দ্রীয় হরিসভা মন্দির প্রাঙ্গণে মহানাম সেবক সংঘের আবির্ভাব উৎসব উপলক্ষে বানারীপাড়া শখার উদ্যোগে ৩ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে মহানাম ব্রত শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। সনাতনী ভক্তবৃন্দ ও পুন্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে উৎসব অঙ্গন।
হিংসামুক্ত মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় মহানামব্রতজীর মানবধর্মের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। বিশ্ববরেণ্য মানবতাবাদী দার্শনিক ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী মহারাজের ১২২ তম শুভ আবির্ভাব উৎসব বানারীপাড়ায় বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে মহানাম সেবক সংঘের উদ্যোগে ৩ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল ড.মহানামব্রতের রজত জয়ন্তী উৎসব, শ্রীমৎ ভাগবত পাঠ, শিশুদের গীতার শ্লোক আবৃত্তি, শীতবস্ত্র বিতরণ, ধর্মসভা।
উৎসব উপলক্ষে অনুষ্ঠানের সমাপনী দিন ২৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল ০৩ টায় বানারীপাড়া বাজার কেন্দ্রীয় হরিসভা মন্দির প্রাঙ্গণে মহাপ্রভু মহানামব্রতজীর জীবনাদর্শ ও অবদান শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠান শেষে মহানামব্রত শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সকলকে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কান্তিবন্ধু ব্রহ্মচারীর উত্তরসূরী বন্ধু কিশোর ব্রহ্মচারী ধর্মীয় শিক্ষা ও দিক নির্দেশনা মুলক বক্তব্য প্রদান করেন। হিংসামুক্ত মানবিক বিশ্ব গড়তে হলে মহানামজীর মানবধর্মের আদর্শের কোনো বিকল্প নেই। কেননা মহানামজী বিশ্বাস করতেন মানুষের ধর্ম কখনো ভিন্ন হতে পারে না। সকল মানব জাতির একটিই ধর্ম মনুষ্যত্ব বা মানবতা।
বানারীপাড়া মহানাম সেবক সংঘের সভাপতি শিক্ষাবিদ রতন কুমার হালদারের শ্রুতিমধুর বক্তব্য ও সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বানারীপাড়া মহানাম সেবক সংঘের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কুন্ডু, সহ-সভাপতি হিমাংশু কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।
ড.মহানামব্রত ব্রহ্মচারী ১৯০৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের খলিশাকোটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৯ সালের ১৮ অক্টোবর মৃত্যুবরন করেন। ১৯৩৩ সালে বাংলাদেশের এই কৃতি সন্তান আমেরিকায় ২য় বিশ্বধর্ম সম্মেলনে যোগ দেন। পাশ্চাত্যের জ্ঞানীগুণীরা মহানামের অসাধারণ বাগ্মীতা ও পান্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে ওয়ার্ল্ড ফেলোশিপ ও ফেইথ এর সেক্রেটারি মনোনীত করেন। বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন শেষে তারা মহানামব্রতজীকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বড় বড় শহরের অসংখ্য কাব সভা সমিতিতে বক্তৃতা দিতে পাঠান।
তার আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি মানবতাবাদের আদর্শে পাশ্চাত্যবাসী সেদিন মুক্তির নতুন দিশা খুঁজে পেয়েছিল। অতপরঃ ১৯৩৯ সালে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে শহরে নগরে ঘুরে ঘুরে মানবধর্মের বাণী প্রচার করে গেছেন। তার অমূল্য গ্রন্থরাজি নতুন প্রজন্মের কাছে প্রচার আজ খুবই প্রয়োজন। তার বিশ্বজনীন মানবতাবাদী চেতনা মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের চিরকাল পথ দেখাবে।
মহানাম সেবক সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক কার্তিক বনিকের সঞ্চালনায়, অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানাম সেবক সংঘের যুগ্ম-সম্পাদক অশোক বনিক, বানারীপাড়া হরিসভা মন্দিরের দপ্তর সম্পাদক হৃদয় সাহা, গোপাল বনিক, কোষাধ্যক্ষ সুশান্ত বনিক, প্রচার সম্পাদক বন্ধু বনিক, অয়ন, চয়ন বনিক, লিটন বনিক, দিপালক কুন্ডু, শুভ চন্দ্র, উজ্জ্বল শীল এছাড়াও বিভিন্ন শাখা সংঘের লোক উপস্থিত ছিলেন।
