রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি: ক্ষোভ ও অভিমানে বিএনপি ছাড়লেন উজিরপুর উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক আহবায়ক কমিটির এক নম্বর সদস্য ও উপজেলার বড়াকোঠা ইউপির জননন্দিত চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন। তিনি বিএনপি ছেড়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক দুই নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (জাপা) ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র (জেপি) নেতৃত্বে ১৮টি দল নিয়ে আত্ম প্রকাশ করা জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের (এনডিএফ) প্রার্থী হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ( ২৫ ডিসেম্বর) তিনি জাপার একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের কাছ থেকে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের (এনডিএফ) মনোনয়ন পত্র গ্রহণ করেছেন। ফিরোজ হোসেন ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দুবাই শাখা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত উজিরপুর উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে পালণ করেন।
২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীসহ চারজনকে হারিয়ে উপজেলার বড়াকোঠা ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। ওই নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম জামাল হোসেন, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু হানিফ,ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলম হাওলাদার এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক পনির হাওলাদারের মত প্রভাবশালী চার প্রার্থীকে পরাজিত করেন। তখন তিনি ছিলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান।
পরে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ পদে তিনি ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালণ করেন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উজিরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েও দলের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাষ্টার আব্দুল মান্নানকে সমর্থন দিয়ে তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নির্বাচনে তার পক্ষে কাজ করেন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে বড়াকোঠা ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বরিশাল-২ আসনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন।
তখন বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর সম্মানে ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল না করে তার পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেন। ২০২৩ সালে তিনি উজিরপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির এক নম্বর সদস্য নির্বাচিত হন। ফিরোজ হোসেনের অভিযোগ ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত বড়াকোঠা ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলে ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়েও তিনি দায়িত্ব পাননি।
সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাইতে অনুষ্ঠিত উজিরপুর উপজেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে তিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু অপর সভাপতি প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর মালিকানাধীন গুঠিয়া বাইতুল ভিউ কনভেনশন সেন্টারে কাউন্সিল হওয়ায় প্রভাবিত হওয়ার আশংকায় এর প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি তাতে অংশ গ্রহণ করেননি। গত ১৫-১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বিএনপি নেতা ফিরোজ হোসেন বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক মামলা,হামলার শিকার হন এবং কারাবরণ করেন। নির্বিঘ্নে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালণ করতে পারেন নি।
তিন দফা তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারন করা হয় ।দুঃসময়ের ত্যাগী,পরীক্ষিত ও নির্যাতিত নেতা ফিরোজ হোসেন বিএনপিতে সঠিক মূল্যায়ন পাননি এবং এক নেতার কর্তৃত্ব-নেতৃত্বে সব চলছে দাবি করে এলাকার উন্নয়ন ও জনকল্যাণে কাজ করার অভিপ্রায়ে জাপা-জেপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বরিশাল-২ আসনে এমপি পদে লড়বেন বলে জানান।
