মো. বেলায়েত হোসেন। বয়স আনুমানিক ৫২ বছর। গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী থানার চড়লক্ষীপুর গ্রামে। পেশায় ছিলেন ক্ষুদ্র ঘানি তেলের ব্যবসায়ী। ফুটপাতে তেল বিক্রি করতেন তিনি। ব্যবসার টাকা দিয়েই গ্রামে তার সংসারের খরচ চলতো। আজ বৃহস্পতিবার সকালেও ছোট ছোট বোতলে তেল নিয়ে বিক্রির জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বেলায়েত। কিন্তু বেপরোয়া ‘বিহঙ্গ’ বাসের ধাক্কায় প্রাণ যায় তার।
একই দুর্ঘটনায় আরেক নিহতের নাম মো. মাকসুদুর রহমান। বয়স আনুমানিক ৪২ বছর। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার নতুন হাবলি গ্রামে। স্ত্রী ও তিন মেয়ে, এক ছেলেকে নিয়ে ঢাকাতেই বসবাস করতেন তিনি। মগবাজারে একটি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে চাকরি করতেন মাকসুদুর। অফিসের কাজে বাংলা মোটর এলাকায় এসেই চাপা পড়েন সেই বিহঙ্গ বাসে।
ঘাতক বাস বিহঙ্গের ধাক্কায় আহত হলেও বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি মো. জাকির হোসেন (৪৫)। মিরপুরের এ বাসিন্দা ফিরছিলেন মালিবাগ থেকে। বাসের ধাক্কায় সামান্য আহত হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন তিনি।
নিহতদের স্বজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। নিহত বেলায়েতের ছেলে তানহা বলেন, ‘বাবা ঘানির তেলের ব্যবসা করতেন। ফুটপাত সরিষার তেল ও নারকেলের তেল বিক্রি করতেন। এই টাকায় আমাদের গ্রামের সংসার চলতো।’ বাংলামোটর এলাকাতেই তার বাবা একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন বলেও জানান তানহা।
নিহত মাকসুদুরের শ্যালক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘দুলাভাই ৩ মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। একটি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সবাইকে নিয়ে ভালোই চলছিল তার সংসার।’ কিন্তু এভাবে মারা যাওয়ায় এখন তার চার সন্তানের কী হবে, প্রশ্ন তোফাজ্জলের।
খাজা শিকদার নামে এক পথচারী প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিহঙ্গ বাসটির গতি ছিল বেপরোয়া। প্রথমে বাসটি জাকির হোসেনের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। তিনি পড়ে গেলে বাসটি দ্রুত মোটরসাইকেলসহ অন্য দুজনকে চাপা দেয়। এতে, ঘটনাস্থলে দুইজনই মারা যান।
শাহবাগ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসান বলেন, ‘বিহঙ্গ বাসটির চালককে আটক করা হয়েছে। তার নাম মো. জাফর মোল্লা। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।