সেই কাক ডাকা ভোর থেকে নি:শব্দ গভীর রাত পর্যন্ত দোকানে পরম যত্নের সাথে কাজ করে। ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী চায়ের কাপ বা গ্লাসটি বার বার গরম ধৌত করে পুনরায় চা পরিবেশন করে।
দোকানের ক্রেতাদের সাথে কথাও বলে মাধুর্য নিয়ে। তাঁর মিষ্ট ব্যবহারে জাতি ধর্ম বর্ণ সম্প্রদায় উপেক্ষা সকলে ছুটছে চা-পান করার জন্য। এভাবে জীবন জীবিকার সংগ্রামে কাজ করছে শ্রাবণী।
এতোক্ষন যে গল্পটুকু তুলে ধরা হলো সেই শ্রাবণীর পুরোনাম শ্রাবণী রানী হাওলাদার। বয়স ৩০ বছর। দু সন্তানের জননী।
বরগুনার তালতলী উপজেলার বদিপাড়া গ্রামের দিনমজুর নকুল চন্দ্র হাওলাদার ও গৃহিনী কুঞ্জু রাণীর ১ ছেলে এবং ৩ মেয়ে মধ্যে শ্রাবণী ৪র্থ।
১১ বছর পূর্বে শ্রাবণীর বাবা সনাতন বিধি অনুযায়ী বরগুনা জেলার বেতাগী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঢালীকান্দা গ্রামের নরেন হাওলাদারের সাথে।
জানা যায়, বিয়ের প্রথম ৫ বছর স্বামীর উপার্জিত টাকায় ভালোভাবেই কেটে যায় দাম্পত্য জীবন। শ্রাবনীর স্বামী নরেন রাজ মিস্ত্রী ও দিনমজুরের কাজ করতো।
এরপর তাঁর অস্থিতে ক্ষয়জনিত রোগ দেখা দেয়। পরিশ্রমের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসা খরচসহ ব্যয় মেটানো অসম্ভবপর হয়ে নরেন।
এরপর জীবিকার টানে থেমে নেই শ্রাবণী। গত ৬ বছর ধরে তাঁর উপার্জনে স্বামী, শ্বাশুড়ি ও দু” সন্তানের পড়ালেখাসহ সকল খরচ বহন করছে।
বেতাগী বাসস্ট্যান্ডের চৌ-মাথার শহরের প্রবেশ পথে সড়কের পাশে ভাসমান চায়ের দোকান করে। ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী চা, পান, সিগারেট, বাদাম, চানাচুর, রুটি, কলা, বিস্কুট ও বিভিন্ন ধরনের চকোলেট পরিবেশন করছে।
শীতের মৌসুমে দুধ, রুটি ও ডিমের চহিদা বেশি থাকে। তাঁর দোকানে এগুলো বিক্রিও হচ্ছে। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বিক্রি করছে।
এতে গড়ে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ শ টাকা আয় থাকছে। আর সেই টাকাই চলছে স্বামীর চিকিৎসাসেবা, ৮ বছর বয়সী দ্বিতীয় শ্রেণির প্রসেনজিৎ হাওলাদারের পড়ালেখার খরচসহ শ্রাবণীর ব্যবহারে ক্রেতারা মুগ্ধ।
কাক ডাকা ভোরে শ্রাবনী দোকানে এসে গভীর রাত পর্যন্ত দোকানে চা বিক্রি করছে। সেই সাথে চা-পান খেয়ে চলে যাওয়া চায়ের কাপ, গ্লাসগুলো গরম পানিতে ধৌত করে।
প্রবীন সাংবাদিক আকন্দ শফিকুল ইসলাম জানায়, ‘ ক্রেতাদের পরিবেশনের সকল গ্লাস, প্লেট, চায়ের কাপ পরিষ্কার পরিছন্ন রাখে এবং তাঁর ব্যবহারে সকলে মুগ্ধ ।’
শ্রাবণী জানায়,’ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করি। ” তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতো কস্টো করে সংসার চালাই। এখন পর্যন্ত সরকারী কোন সংস্থা কোন সাহায্য করে নাই।
এ বিষয় পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর মো. নাসির উদ্দিন ফকির বলেন,’ ইতোমধ্য ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন সময় তাকে সাহায্য সহযোগিতা করেছি এবং ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
প্যানেল মেয়র এবিএম মাসুদুর রহমান খান বলেন,’ তাঁর প্রতি আমরা আন্তরিক। তবে সরকারি বিধি মোতাবেক সাহায্য করা হবে।’