সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের চূড়ান্ত রোডম্যাপ তৈরি করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ রোড মার্চ এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা করছে দলটি। রমজানের আগেই চলমান আন্দোলনকে একটি ‘কাঠামোগত রূপ’ দেওয়ার চিন্তা মাথায় রেখে চূড়ান্ত কর্মসূচির ছক আঁকছে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা বিরোধী দল বিএনপি।
সম্প্রতি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য সময়ের আলোকে কর্মসূচি নিয়ে এসব কথা বলেন। তারা জানান, রমজানের পর আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে যাওয়া হবে। ফেব্রুয়ারিতে ‘মার্চ ফর ঢাকা’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আনা হবে। এরপর ঢাকায় স্মরণকালের বৃহৎ মহাসমাবেশ করে আন্দোলনকে একটি সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে রাখা হবে। সেখান থেকে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে দল। এর মাধ্যমে দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এক সদস্য বলেন, যদিও টানা প্রোগ্রাম করতে গিয়ে নেতাকর্মীরা কিছুটা পরিশ্রান্ত, আর তৃণমূলে প্রোগ্রাম করাটাও অনেক সময় ডিফিকাল্ট হয়; তবু আন্দোলনের গতি ধরে রাখতে হবে। এর বিকল্প নেই। তাই রোজার কাছাকাছিতে স্বাভাবিকভাবে বড় প্রোগ্রাম করা যাবে না। এখনই সব ঠিকঠাক করতে হবে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ‘মার্চ ফর ঢাকা’ শেষ করে সব প্রস্তুতি নিয়ে মার্চের শুরুতে ঢাকায় মহাসমাবেশ। এরপর যা হওয়ার হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ করে আরেকজন নীতিনির্ধারক বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগে যে উজ্জীবিত সমাবেশ হয়েছে; তার ধারাবাহিকতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। নেতাকর্মী ও জনগণের আকাক্সক্ষার লাগাম টানা যাবে না। তবে আপাতত কর্মসূচি দেখে মনে হচ্ছে ১০ ডিসেম্বরের আবহ ধরে রাখা যাচ্ছে না।
সিলেটে গণ-অবস্থানের লোকসমাগম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়নি সিলেটের নেতাকর্মীরা আপ টু দ্য মার্ক কাজ করেছেন। তাদের বডিল্যাঙ্গুয়েজ তা বলেনি।’
এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দুয়েকটি বাদে অন্য বিভাগগুলোতে ভালো সমাগম হয়নি; যেভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চেয়েছেন। চেয়ারম্যান সাহেব জেলার নেতাদের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলার পরও কেন এমন হলো- তা দেখা দরকার। যেখানে ঘাটতি আছে, সেখানে সাংগঠনিক নেতারা কাজ করবেন।’ তিনি বলেন, প্রত্যেক কর্মসূচির পরে আমাদের রিভিউ করতে হবে। লিখিত রিপোর্ট ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া দরকার। রিপোর্ট দেখে ঘাটতি পূরণে পদক্ষেপ নিতে হবে। অতিদ্রুত আমাদের চূড়ান্ত আন্দোলনের মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। সামনে কোনো পথ নেই। এটি আমাদের পক্ষে সম্ভব। নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা আছে। জেলের মধ্যেও তারা উজ্জীবিত। তাদের চাওয়া আমরা যেন এবার বড় কোনো ভুল না করে ফেলি। এসব স্পৃহা কাজে লাগাতে হবে। তবে নেতারা বাধাবিপত্তির পরও কর্মসূচি সফলে স্বস্তি প্রকাশ করেন।
এদিকে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে ঢাকায় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করায় মনোযোগ দিয়েছে বিএনপি। ঢাকা প্রস্তুত হওয়ার পর সারা দেশ থেকে একযোগে দ্রুত সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চায় দলটি। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সময়ের আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিনই তো আমাদের আন্দোলন চলছে। সামনে ঢাকায় কর্মসূচি আরও জোরালো হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে অহিংস কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বিএনপি। সরকারের কোনো উসকানিতে পা দেব না আমরা। বিএনপির এসব কর্মসূচি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করছে। তবে দলটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ৩০ ডিসেম্বর রাজপথে নামলেও পিছুটান দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়েও বিএনপি মহাসচিব জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।
বরিশাল ডট নিউজ/স্ব/খ