More

    ক্ষমা শুরু আওয়ামী লীগে

    অবশ্যই পরুন

    নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্নভাবে দলীয় শাস্তিপ্রাপ্তদের ক্ষমা পর্ব শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই দলের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইতিমধ্যে দলকে শক্তিশালী করতে স্থানীয় নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী, মদদদাতা ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্তদের ক্ষমা প্রক্রিয়া শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলটি।
    দলীয় সূত্র বলছে, বিগত দিনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং জেলা-উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করা এসব প্রার্থীর অধিকাংশেরই জয়ের পাল্লা ছিল ভারী। নির্বাচন ঘিরে বিরোধের জের ধরে সহিংসতার ঘটনায় প্রাণহানিও হয়েছে অনেক।

    বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল দলটি। তবে সম্প্রতি আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে সুসংগঠিত করার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। ইউপি ও জেলা-উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের ভেতরে যে বিরোধ ও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্তে অটল থেকে দলে ঐক্য ফেরানো সম্ভব নয়। যে কারণে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দলে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।
    অন্যদিকে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ১৭ (৬)-এ বলা আছে, ‘আওয়ামী লীগের যেকোনো সদস্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ কর্তৃক গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আপিল বিবেচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে।’ ৪৭ (২)-এ বলা আছে, ‘আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির নিকট সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে আপিল করা যাইবে এবং এইরূপ ক্ষেত্রে জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।’

    এরই পরিপ্রেক্ষিতে গাজীপুর মহানগর দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা করেছে আওয়ামী লীগ। সূত্র বলছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১ জানুয়ারির এক চিঠিতে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গাজীপুর মহানগর দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে আওয়ামী লীগ। গত শনিবার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার কাছ থেকে এ চিঠি গ্রহণ করেন জাহাঙ্গীর। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।
    ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে আনীত সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ স্বীকার করে আপনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হবেন না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এমতাবস্থায় গত ১৭ ডিসেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গঠণতন্ত্রের ১৭ (৬) এবং ৪৭ (২) ধারা মোতাবেক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা করে আপনার লিখিত আবেদন পর্যালোচনা করে এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে আপনার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করা হলো। ভবিষ্যতে কোনো প্রকার সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে তা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।’

    এ ছাড়া ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ক্যাসিনো কাণ্ডসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ইতিমধ্যে গত ১১ মে আদালত তিন শর্তে সম্রাটের জামিন আদেশ দিয়েছেন। ১৬ মে দুদক সম্রাটের জামিন বাতিলের আবেদন করে উচ্চ আদালতে। পরে অসুস্থ বিবেচনায় তাকে জামিন দেওয়া হয়। এরপরই তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ বড় একটি শোডাউন করে তার অনুসারীরা। এরপর আর সম্রাট ঘর থেকে বের হচ্ছেন না, তাকে ঘরে থাকতে বলেছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তাকে সময়মতো রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ক্যাসিনো কাণ্ডে গ্রেফতার সাবেক যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এ ছাড়া বহিষ্কৃত যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকেও দলে ফেরানো হতে পারে। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কায়সারকেও আবার রাজনীতিতে সক্রিয় করা হতে পারে।
    অন্যদিকে সম্প্রতি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথেরও বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার হতে পারে। একই সঙ্গে ইউপি ও জেলা-উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযুক্ত নেতাদেরও গত ১৭ ডিসেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এসব নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ইউনিয়ন, জেলা-উপজেলা কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন ধরে। সে কারণে এমন বিদ্রোহীদের শাস্তির আওতায় রেখে ঐক্য ফেরানো দুরুহ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক যুগ্ম সাধারণ ও সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, শাস্তি বলবৎ রেখে দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামাতে হিমশিম খেতে হবে। এতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে নির্বাচনমুখি করতে হলে বিদ্রোহীসহ যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে, তাদের সবাইকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা ছাড়া আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। ফলে আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতেই গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করা হয়েছে। এ ছাড়া এমন আরও অনেককে ক্ষমা করার পরিকল্পনা রয়েছে দলের। কারণ আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
    এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত এবং শাস্তি পাওয়া নেতাদের ক্ষমা করার দৃষ্টান্ত আগেও ছিল। দলের গঠনতন্ত্রেও এই বিধান রয়েছে। ফলে জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া যারা বিভিন্ন সময় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, এদের মধ্যে যারা ক্ষমা চেয়েছেন, তাদের ক্ষমা করা হয়েছে। এটা তো দোষের কিছু নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ কথা বলতে রাজি হননি।
    এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কিছু কৌশল গ্রহণ করতে হয়। বিদ্রোহীদের বিষয়ে শাস্তিও তেমন কিছু হতে পারে। বিদ্রোহীদের শাস্তি তো বড় কিছু নয়। পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়ে থাকে। বহিষ্কার তো নয়। গত ১৭ ডিসেম্বর দলের জাতীয় কমিটির সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অপরাধ বিবেচনা করে মাফ করা হয়েছে।
    এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সময়ের আলোকে বলেন, বিভিন্ন সময় বিদ্রোহী প্রার্থী বা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, তাদের মধ্যে যারা ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছিলেন, তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দলের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন, তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতেও যারা ক্ষমা চেয়ে আবেদন করবেন, তাদেরগুলো বিবেচনা করা হবে। তবে এর বাইরে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, তারাও যদি দলের কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে আবেদন করেন, সেটি বিবেচনা করা হতে পারে।
    বরিশাল ডট নিউজ/স্ব/খ 

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০

    বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত...