খান মনিরুজ্জামানঃ জেলেদের খাদ্য সহায়তা বিতরণে অনিয়ম, বিভিন্ন মালামাল চেয়ারম্যান ও মেম্বার কর্তৃক লুটপাট, বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীতে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ কর্তৃক জাল নৌকা আটক, তাদের নিয়োগকৃত দুর্নীতিবাজ মাঝি কর্তৃক অর্থ আদায় বন্ধের দাবিতে বরিশালে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি জেলে সমিতি, বরিশাল জেলা কমিটি।
আজ ২১ মার্চ মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হল সম্মুখে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি জেলে সমিতি, বরিশাল জেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান হাওলাদার’র সভাপতিত্বে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি জেলে সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ইসরাইল পন্ডিত বলেন, আমরা এদেশের দরিদ্র মৎস্যজীবী ও ট্রলার শ্রমিকরা দেশের আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও সাগর ও নদীতে মৎস্য আহরণ করি।
গত ১৯ আগষ্ট ২০২২ ও ২১ নভেম্বর ২০২২ এই দুটি প্রলয়ংকারী জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা হয়ে গেল। এতে শতাধিক জেলে প্রাণ হারিয়েছে এবং শতশত ট্রলার নিখোঁজ হয়েছে। প্রায় ১৩৫ জন মৎস্যজীবী ও ট্রলার শ্রমিক ১৮-১৯ ঘন্টা সাঁতার কেটে ভারতীয় জলসীমায় পৌঁছালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদেরকে উদ্ধার করে বিভিন্ন কারাগারে রাখে। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সরকারের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১০-১৫ খানা আবেদন করেছি। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১২০ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু এখনো ১৮ জন উড়িষ্যার কারাগারে আটক রয়েছে। তাদের মুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিসেম্বর ২০২২ পত্র দিয়েছি। কিন্তু দিল্লীর বাংলাদেশ হাইকমিশনের অবহেলার কারণে দীর্ঘ ৪ মাস ধরে ১৮ জন জেলে এখনো মুক্তি পায় নাই। তাদের পরিবার আজ মানবেতর জীবন যাপন করছে। ভারতের কারাগারে আটক জেলেদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি জেলে সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন শিকদার বলেন, গত ১৯ আগস্ট ও ২১ নভেম্বর ২০২২ প্রলয়ংকারী বন্যায় যে সমস্ত জেলে মারা গেছে তাদের পরিবার পরিজনকে সরকার বা কোন সংস্থা কোন সাহায্য সহযোগিতা করে নাই। সরকারের মৎস্য বিভাগ জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য অনেকগুলো প্রকল্প চালু করেছে। সে প্রকল্পগুলোর সাহায্য প্রকৃত জেলেরা পায় নাই কতিপয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান, মেম্বাররা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ, জাল, গরু, হাঁস-মুরগি এগুলো জেলেদের দেবার কথা কিন্তু প্রকৃত জেলেরা পায় নাই। এগুলো পায় চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের অনুগত-স্বজনরা। জেলেদের ৪ মাসের খাদ্য সহায়তা ও ৬৫ দিনের ইলিশ রক্ষার খাদ্য সহায়তা শুধু চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। দেশের প্রায় সব ইউনিয়নে একই চিত্র। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে তিনি এইসব অনিয়মের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন। তাদের দাবি না মানা হলে রমজানের পর জেলা ও উপজেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করবে।
মানববন্ধন শেষে নেতৃবৃন্দ জেলেদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলাপ্রশাসক কার্যালয় গিয়ে তাদের দাবিকৃত স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দেয়।
স্মারকলিপির দাবিগুলো হলোঃ
১) বিগত দিন থেকে যে সকল মৎস্যজীবী জেলে তাদের ট্রলার সহ ভারতে আটক রয়েছে তাদের দেশে ফিরেয়ে আনতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২) মৎস্য বিভাগের সকল পর্যায়ের প্রকল্পে মৎস্যজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি এবং জেলেদের ভিজিএফ বিতরণে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সকল নদীর মোহনায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে।
৩) মৎস্যজীবীদের জন্য মৎস্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৪) বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীতে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ কর্তৃক জাল নৌকা আটক ও তাদের নেতৃত্বে নিয়োগকৃত দুর্নীতিবাজ মাঝি কর্তৃক অর্থ আদায় বন্ধ করতে হবে।
৫) মৎস্যজীবী জেলেদের নামে খাস ভূমি বরাদ্দ দিতে হবে। জল মহালের আয়তন মৎস্যজীবী জেলে সংগঠনের নামে বরাদ্দ দিতে হবে।
৬) মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে এফআইডি কার্ডধারী জেলেদের সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া আহরণে ব্যবস্থা করতে হবে। সাগরে ইলিশ মাছ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের তালিকা নবায়ন করে সহায়তা দিতে হবে।
৭) সাগর, নদীতে মৎস্য আহরণে জলদস্যু ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে নিহত এফআইডি কার্ডধারী জেলে পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
৮) ট্রলার শ্রমিক ও জেলেদের জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত মালামাল বন্টনের নামে লুটপাট বন্ধের লক্ষ্যে ট্রলার শ্রমিক প্রতিনিধি, নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড, নৌপুলিশ, মৎস্য বিভাগ সমস্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।
৯) গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী ট্রলার শ্রমিক ও জেলেদের ৬৫ দিনের খাদ্য সহায়তা ও বিভিন্ন উপকরণ জেলেদের মাঝে সঠিকভাবে বিতরণে ট্রলার শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে