More

     আগৈলঝাড়ায় মাছ বিক্রি করছে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ দশ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ন সড়ক পাড়ি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ক্রয় করে

    অবশ্যই পরুন

    আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ  বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সংসারে অভাব—অনটনের কারনে সংসারের হাল ধরতে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাছ বিক্রি করার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিদিন ভোর রাতে ওই গৃহবধূ বাড়ি থকে পায়ে হেটে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আরও আট থেকে দশ কিলোমিটার দূরত্বে উপজেলার গৈলা বাজারের পাইকারি মাছ বাজারে গিয়ে মাছ ক্রয় করেন।

    পরে সেই মাছ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন তিনি। তিনি উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের হাওলা গ্রামের দিনমজুর বিজয় হালদারের আটমাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী চন্দনা হালদার। অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ চন্দনা হালদার জানান, তিনজনের সংসারে স্বামী বিজয় হালদার একসময় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। পরে বিভিন্ন সময় সাইকেলের পিছনে  বেঁধে ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করতেন।

    বিজয় হালদার গত ৫ বছর আগে প্যারালাইষ্টড হয়ে বর্তমানে শয্যাশায়ী রয়েছেন। একমাত্র উপার্যনক্ষম স্বামীর চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাতে যখন হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার তখন সংসারের হাল ধরতে চন্দনা মাছ বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। মাছ ক্রয় করে হাওলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে বসে মাছ বিক্রি করেন তিনি।

    এছাড়া প্রতিদিন সকল মাছ বিক্রি না হলে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাছ বিক্রি করতে হয় তাকে। প্রতিদিন মাছ বিক্রি করে দুই তিনশত টাকা আয় হলেও যাতায়াতের জন্য ভ্যান ভাড়া দিতে হচ্ছে ৭০/৮০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকা দিয়েই চলে তার সংসার। এছাড়া যেদিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকে সেদিন মাছ ক্রয় বিক্রয় করতে না পারলে স্বামী সন্তানকে নিয়ে উপোস থাকতে হয় চন্দনাকে।

    একমাত্র বসবাসের অনুপযোগী ঘরটি ছাড়া তেমন কোন জায়গা জমিও নেই তাদের। এপর্যন্ত সরকারী বা বেসরকারী কোন সহযোগিতা পাননি তারা। দিনমজুর বিজয় হালদার জানান, ৯ বছর পূর্বে নওগা জেলার মহাদেবপুর উপজেলার দুলালপাড়া গ্রামের কালিপদ মন্ডলের মেয়ে চন্দনা হালদার ঢাকায় একটি গার্মেণ্টসে চাকুরীরত অবস্থায় মোবাইল ফোনে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রে ধরে চন্দনার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর দুই বছর পর পারিবারিক ভাবে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।

    তাদের দাম্পত্য জীবনে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। দাম্পত্য জীবন তাদের সুখের কাটলেও হঠাৎ করে স্বামী বিজয় হালদার অসুস্থ্য হয়ে পরায় চন্দনার জীবনে তখন হতাশার ছাপ নেমে আসে। স্থানীয় নরত্তম কীতুর্নীয়া জানান, বিজয় হালদার অসুস্থ হওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী চন্দনা স্বামী ও সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে ঝুঁকিপূর্ন মাছ বিক্রির ব্যবসা বেছে নেয়। বর্তমানে চন্দনার হাওলা বাড়ি থেকে ঐচারমাঠ বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ন কর্দমাক্ত কাঁচা সড়ক দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গৈলা বাজারে মাছ ক্রয়ের জন্য যাতায়াত করে চন্দনা।

    এতে করে চন্দনা যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার স্বীকার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় লীলা বিশ্বাস জানান, একজন নারী হয়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্বেও চন্দনা স্বামী ও সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে ঝুঁকিপূর্ন মাছ বিক্রির ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাড়ানোর জন্য সরকারসহ সমাজের বিত্তবান সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

    গৈলা মাছ বাজারের পাইকারী আড়ৎতার মহাদেব মন্ডল জানান, আমার ব্যবসায়ী জীবনে কখনও দেখিনি সংসারের হাল ধরতে একজন আটমাসের গর্ভবতী নারী অন্যন্যা পুরুষ মৎস্য ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিযোগিতার (ডাকের) মাধ্যমে মাছ ক্রয় করে আট দশ কিলো ঝুঁকিপূর্ন সড়ক পাড়ি দিয়ে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। রত্নপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা সরদার জানান, আমার ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকারের যে কোন ধরনের সহযোগিতা রয়েছে তা চন্দনার পরিবারকে দেয়া হবে।

    আমার পরিষদের মাধ্যমে এই অসহায় পরিবারটির জন্য প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল ও একটি মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, মাছ ব্যবসায়ী চন্দনা হালদারের পরিবারকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ইতিমধ্যে সমাজকল্যান পরিষদের মাধ্যমে তাকে আর্থিক ভাবে সহয়তা করা হয়েছে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    হানিট্র্যাপের শিকার মির্জাগঞ্জের আশ্রাফ হাওলাদার, ১ নারী গ্রেপ্তার

    অনলাইন ডেস্ক:  এবার হানিট্র্যাপের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আশরাফ...