আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে ২শত ৪৩ বছরের প্রাচীণ মারবেল মেলা সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের অঁাক গ্রামে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় শুধু আগৈলঝাড়া উপজেলাই নয়, পার্শ্ববতীর্ কোটালীপাড়া, উজিরপুর, ডাসার, মাদারীপুর, কালকিনি, গৌরনদী, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বয়সের হাজার—হাজার নারী—পুরুষ অংশগ্রহণ করে।
মেলা কমিটির সভাপতি রাম কৃষ্ণ হালদার জানান, রামানন্দের অঁাক গ্রামে ২শত ৪৩ বছর পূর্বে আউলিয়া মা সোনাই চাঁদের ৬বছর বয়সে বিয়ে হয়। ৭বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নি:সন্তান অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে একটি নিম গাছের গোড়ায় শিবের আরাধনা ও পূজা—অর্চনা আরম্ভ করে।
ক্রমশ: তাঁর অলৌকিত্ব ছড়িয়ে পরলে ওই স্থানে বাৎসরিক পূজার আয়োজন করা হয়। মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ইং সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে নবান্নের অয়োজনের মাধ্যমে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাঁর মৃত্যুর পরে ওই বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে।
প্রতিবছর এই দিনটি উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, নাম সংকীত্তর্ন, কবিগান শেষে সোয়ামণ (৫০ কেজি) চালের গুড়ার সাথে সোয়ামণ অঁাখের গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় কলাসহ অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নবান্ন তৈরী করে মেলায় আগত দর্শণার্থীদের প্রসাদ হিসাবে বিতরণ করা হয়।
হিন্দু স¤প্রদায়ের অন্যতম আকষর্ন পৌষ সংক্রান্তিতে বাস্তুপূজা উপলক্ষে ২শত ৪৩ বছর ধরে এ গ্রামে মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মারবেল খেলার মূল রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় প্রবীর বিশ্বাস জানান, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিল। যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে আমরা সেই প্রাচীণ ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
ওই বাড়ির মেয়ে মারবেল মেলা উপলক্ষে ঢাকা থেকে শিখা বিশ্বাস পরিবারসহ এসেছেন। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলা থেকে মারবেল খেলার জন্য এসেছেন সৈকত বিশ্বাস, বাগধা গ্রাম থেকে নমিতা মন্ডল পরিবারের সকলকে নিয়ে মারবেল মেলায় এসেছে। তারা জানান মেলায় এসে মারবেল খেলতে পেরে ভাল লাগছে। এদিনটিকে ঘিরে রামানন্দের অঁাক গ্রামে মহোৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে—জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়— স্বজনদের এ মারবেল মেলায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে মেলায় আগত প্রভাষক তরুন চন্দ্র নাথ জানান, এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী মারবেল খেলার কথা শুনে মেলায় এসেছি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রামানন্দের অঁাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মারবেল খেলা চলছে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদী জমি, বাগানসহ সর্বত্রই মারবেল খেলার আসর বসেছে। বিদ্যায়ল মাঠে বসেছে বাঁশ—বেত শিল্প সামগ্রী, মনিহারী, খেলনা, মিষ্টি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান।
কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে মেলায় আগত শেখর দাস জানান, এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী মারবেল খেলার কথা শুনে মেলায় এসেছি। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। বাশাইল গ্রামের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র দিনেশ রায় ও ১০ম শ্রেণীর ছাত্র শুভ সমদ্দার জানায়, সারা বছর টাকা জমিয়েছি মারবেল খেলার জন্য।
শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, কিশোরী, যুবক—যুবতীরা মেলার প্রধান আকর্ষণ মারবেল খেলায় অংশগ্রহণ করেন। মেলায় মারবেল খেলার জন্য অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন তাদের জন্য পূর্ব থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলাকে জনপ্রিয় করার জন্য মেলাস্থলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ মাঠ স¤প্রসারণ করার জন্য সরকারের দৃষ্টি কামণা করছেন এলাকার জনগন।
এব্যাপারে আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।