স্টাফ রিপোর্টারঃ বরিশালের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে হঠাৎ শূন্যতা দেখা দিয়েছে। তালা ঝুলছে সবগুলো ডকইয়ার্ডে। অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ। এমনকি মেরামত করারও কোনো গ্রাহক পাচ্ছেন না মালিকরা। তবে, পায়রা বন্দর পুরোপুরি চালু হলে আবারও এ শিল্প চালুর সম্ভাবনার রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, এক সময় জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতে কর্মব্যস্ত থাকা বরিশালের সুন্দরবন শিপইয়ার্ডে এখন সুনশান নীরবতা। আগে এ সময় ৩ থেকে ৪টি জাহাজ নির্মাণের কাজ চললেও এখন নেই একটিও। ফলে অলস সময় পার করছেন কর্মীরা। একই অবস্থা কীর্তনখোলার তীরে গড়ে ওঠা অন্তত ১২টি শিপইয়ার্ডের।
কয়েক বছর আগে সাড়া জাগিয়েছিল বরিশালের জাহাজ নির্মাণ শিল্প। বিনিয়োগ ছাড়িয়ে যায় ৩০০ কোটি টাকা। প্রতিবছর অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি জাহাজ নির্মাণ করা হতো এখানকার প্রতিটি ডকইয়ার্ডে। এখন নেমে এসেছে শূন্যের কোটায়।শ্রমিকরা জানান, আগে কাজের চাপে ছুটি না পেলেও এখন অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা। অনেকে আবার জাহাজের কাজ না থাকায় দিনমজুরের কাজ করছেন। গত এক বছর ধরে কোনো কাজ নেই। এতে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সড়ক পথে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে ব্যাপক পরিবর্তন আসায় নৌরুটে যাত্রী সংকট দেখা দেয়। এরপর থেকেই জাহাজ নির্মাণে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এমনকি, প্রতিনিয়ত লোকসানের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ঋণদানকারী ব্যাংকগুলোও।
সুন্দরবন শিপইয়ার্ড এর ব্যবস্থাপক সোহাগ হাওলাদার বলেন, আগে বরিশালে প্রচুর জাহাজ নির্মাণ করা হতো। কিন্তু সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় বরিশালে নৌপথে ভাটা লেগেছে। যার প্রভাব পড়েছে এ ব্যবসায়। সরকার এবং ব্যাংকগুলো যদি পাশে না দাঁড়ায় তাহলে এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, বরিশাল ব্রাঞ্চের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলো সব সময় লাভ চায়। বর্তমানে শিপইয়ার্ড ব্যবসা লোকসানে চলছে। তবে সরকার যদি আশ্বাস দেয় তাহলে আমরা পাশে দাঁড়াবো। তবে, স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা জানান, পায়রা বন্দর পুরোপুরি চালু হলে আবারও সুদিন আসতে পারে বরিশালের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে। আর এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের সহায়তার কথা জানান জেলা প্রশাসক।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক এস এম জাকির হোসেন বলেন, বর্তমানে ব্যবসায় ভাটা চললেও পায়রা বন্দর পুরোপুরি চালু হলে এ ব্যবসায় সুদিন আসবে বলে আশা করি। পাশাপাশি এ ব্যবসা প্রসারে সরকার এবং ব্যাংকগুলোর সহায়তা চাই।
বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, শিপইয়ার্ডগুলোতে এখন কিছুটা মন্দা চলছে। ব্যবসায়ীরা যদি আমাদের কাছে সহযোগিতা চায় আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি। ১৯৬৩ সালে বরিশালে প্রথম খাজা ডকইয়ার্ড নামে প্রতিষ্ঠান নৌযান নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০০০ সালের পর থেকে নগরীর বেলতলায় শুরু হয় আধুনিক ও বিলাসবহুল জাহাজ নির্মাণ। এরপর থেকেই ক্রমান্বয়ে গড়ে ওঠে আধুনিক শিপইয়ার্ডগুলো।