সারা দেশে প্রচণ্ড তাপদাহে সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস উঠলেও কৃষকরা ক্ষেতের ধান নিরাপদে ঘরে তুলতে এখনই বৃষ্টি চাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ শেষে মোনাজাত করছে সাধারণ লোকজন। এর ব্যতিক্রম দেখা দিয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার কৃষকদের মাঝে।
এখানে ২৬ হাজার ৮ শত ৪ জন কৃষক জমির পাকা ধানের ৪০ ভাগ ঘরে তুললেও বাকী ৬০ ভাগ আধা—পাকা ধান এখনো জমিতে রয়েছে। অব্যাহত তাপাদাহে জমির ধান তুলতে কৃষকদের কষ্ট আরো বৃদ্ধি পেলেও আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তারা বৃষ্টি চাচ্ছে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আগৈলঝাড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ক্ষেতে ধানের বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে ঝড়—বৃষ্টির আশঙ্কায় ভুগছেন কৃষকরা। ফুল্লশ্রী গ্রামের খোকন হাওলাদার ৬০ শতাংশ জমি ১২ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে বাকপাড়া ব্লকে বোরো চাষাবাদ করেছে। জমিতে ফসল ভাল হয়েছে।
ধানকাটা শ্রমিক না পাওয়ায় স্ত্রী সেহরন বেগমকে নিয়ে প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে ধান কাটছে। কৃষক ভবরঞ্জন বিশ^াস তিনজন শ্রমিক দিয়ে নিজের ৮০শতাংশ জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাকে একাজে সহযোগিতা করছেন স্ত্রী কল্পনা বিশ^াস। চাষি হেমায়েত ফকির ৫ একর জমির পাকা ধান ঘরে তুলতে শ্রমিক নিয়ে দিনরাত কাজ করছেন।
তিনি আল্লাহ’র কাছে ফরিয়াদ করে বলেন, হে আল্লাহ এই মুহূর্তে আমাদের এলাকায় বৃষ্টি দিয়ো না। চাষি রাম প্রসাদ দাসের ৪০ শতাংশ জমির ধান পাকলেও শ্রমিক না পাওয়ায় ঝড়—বৃষ্টির আশঙ্কায় নিজেই ধান কাটতে শুরু করেছেন। বাকাল এলাকার চাষি রমণী বিশস বলেন, দুই একর জমির বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে ধান কাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
একজন শ্রমিক সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ধানকাটা মজুরি দিতে হয় ৮শত টাকা। আমরা কষ্ট করে জমিতে বাম্পার ধান ফলিয়েছি। এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে জমিতে পানি জমবে। ফলে জমির ধান তুলছে কষ্ট হবে এবং শ্রমিক পাওয়া যাবে না। বাকাল গ্রামের চাষি সুশীল হালদার বলেন, প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে জমি থেকে পাকা ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। তাপদাহের কারণে ধান কাটতে গিয়ে অনেক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পরছে। দাবদাহ থেকে ধান কাতার শ্রমিকদের নিরাপদে রাখতে খাবারের পাশাপাশি ঠান্ডা পানি ও খাবার স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও আমরা ধান ঘরে তুলতে আরো কষ্ট করতে রাজি আছি।
এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে আমার মত শতশত চাষি ধান তুলতে ভোগান্তিতে পরবে। খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা থেকে নির্মল দাসের নেতৃত্বে ১৯ জনের একটি দল ধান কাতার জন্য বসুন্ডা এলাকায় আসর পরে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন গ্রুপে ধান কাটছে। তারা জানায়, আমরা মালিকদের কাছ থেকে ছয় ভাগায় ধান কাটছি। তবে বৃষ্টি হলে ক্ষেতে পানি জমে আমাদের ধান কাটতে কষ্ট হবে। ঝালকাঠী জেলা থেকে রিপন হাওলাদারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি ধান কাটা শ্রমিকের দল আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপাড় গ্রামে এসেছে।
রিপন জানান, আমরা এখানে একমাস ধান কেটে জনপ্রতি ২০ মন করে ধান নেওয়ার টার্গেট করেছি। এতে আমাদের পরিবারের ৬ মাসের খাবার হবে। বৃষ্টি হলে জমিতে পানি জমলে আমাদের টার্গেট পুরন হবে না। আমরা আগামী ১৫—২০দিনে বৃষ্টি চাই না। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা থেকে ধানকাটা হারভেস্টার মেশিন নিয়ে বড়মগরা গ্রামে এসেছেন ওবায়দুল্লাহ খলিল।
তিনি প্রতি শতাংশ জমির ধানকাটা ও মাড়াই বাবদ ১শত টাকা নেন। যদি এখন বৃষ্টি হয় তাহলে জমিতে পানি জমলে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা সম্ভব হবে না। তাই এই মুহূর্তে বৃষ্টির প্রয়োজন নেই। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিযুষ রায় বলেন, এই উপজেলায় ৯ হাজার ৪ শত ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ক্ষেতের ৫০ ভাগের বেশী আধা—পাকা ধান এখনও জমিতে রয়েছে। এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে প্রায় ২৭ হাজার কৃষকরা জমির ধান তুলতে ভোগান্তিতে পরবেন।