More

    প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে খাস জমিতে গড়ে উঠেছে দোকানঘর

    অবশ্যই পরুন

    স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন রেকর্ডীয় সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করার অভিযোগ উঠেছে একদল প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের গিলাবাড়িয়া বাজারে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।

    অভিযোগের পর তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম সাঈদ তদন্ত করে মন্তব্য দেন প্রতিটি দোকানঘর লিজ না নিয়ে সরকারি খাস জমি ও কিছু অংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি প্রশাসনিকভাবে জরিপ করে সমস্যা সমাধানের সুপারিশ করলেও সেই সিদ্ধান্ত আজও বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো দখলকারীরা প্রতিনিয়ত অভিযোগকারীদের ভয়ভীতি, হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক দোকান সংস্কার ও পুননির্মাণের নামে জমি দখল করে চলছে। তবে অভিযুক্তরা বলছেন, খাস জমি সরকারের যখন প্রয়োজন হবে ছেড়ে দিবেন।

    প্রায় ২৫ বছর ধরে তারা জমি দখলে আছেন তবে কারো কোন ডিসিআর নেই। অথচ আইন অনুযায়ী খাস জমি দখল করে দোকান করা সম্পূর্ণ অবৈধ। যে কোনো সময় উচ্ছেদ এবং দখলদারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে খাস জমি দখল হলেও নজর নাই প্রশাসনের।

    ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, জেএল নং ৫৬, বাশবাড়িয়া দড়িয়াবাদ মৌজায়, এস এ খতিয়ান নং ১৮৫ এর রেকর্ডীয় মালিক আবদুল হাসেম, আমজর আলী ও আমিরচান বিবি। তাদের ওয়ারিশ মোসলেম সিকদার, ছয়জদ্দীন মোল্লা, দুই বাক প্রতিবন্ধী সোনবান বিবি ও আবুল সিকদার। তারা উক্ত খতিয়ানে ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিক। বর্তমানে খতিয়ানের ১০৬৮ দাগে ৩৪ শতাংশ জমিতে ২৪.২৫ জমিতে রেকর্ডীয় মালিকদেরা ওয়ারিশরা ঘরবাড়ি নির্মাণ করে ও গাছপালা রোপণ করে ভোগদখলে আছে।

    প্রায় ২৫ বছর পূর্বে এলজিডির রাস্তা নির্মাণের জন্য তাদের ফসলী জমিতে ডোবা করে মাটি কেটে রাস্তায় দেয়া হয়। রাস্তা নির্মাণের পর দুইপাশে খাস জমি ছিলো।এসময় বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা দশমিনার কিছু ব্যক্তি গিলাবাড়িয়া বাজারের রাস্তার দুই পাশে খাস জমিতে দোকানঘর নির্মাণ করে দখলে নেয়। অভিযোগ ওঠে, রাস্তার পশ্চিম পাশে খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ করেছে একদল প্রভাবশালী ব্যবসায়ী।

    এ নিয়ে রেকর্ডীয় মালিকরা বাধা দিলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জোরপূর্বক জমি দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। ফলে রেকর্ডীয় সম্পত্তির ঘরবাড়ি ও পুকুর দোকানের পেছনে পড়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। একইসাথে ব্যক্তি মালিকানা জমি দখল করে একেরপর এক দোকানঘর নির্মান করছে প্রভাবশালীরা। ভুক্তভোগীরা জানান, খাস জমি দখল করে দোকান নির্মাণের কারণে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এবং বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দরিদ্র পরিবারটি। তাদের দুই বাক প্রতিবন্ধী ভাই বোন রয়েছে।

    পিতার সম্পত্তি ফিরে পেতে তারাও ছুটে চলেছেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। তারা বলেন, অভিযোগের পর ব্যবসায়ীরা দোকান পাকাপোক্ত করে নির্মাণের পায়তারা করছে। গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ব্যবসায়ী সবুজ দোকান সংস্কার শুরু করলে বাঁধা দেন তারা কিন্তু তিনি জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ করতে থাকে। এ ঘটনায় রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী মোসলেম সিকদার। থানা থেকে সহকারী উপপরিদর্শক এএসআই মো. তুষারকে তদন্তের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গিলাবাড়িয়া বাজারের দুই পাশে অসংখ্য দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এসময় অভিযুক্ত ব্যবসায়ী সবুজ, শহিদুল তালুকদার ও মো. হোসেনসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার পাশের জমিতে দোকান পরিচালনা করছেন।

    তাদের দাবি, প্রায় ২৫ বছর ধরে এই জমি তারা ব্যবহার করছেন। সরকারের প্রয়োজন হলে খাস জমি ছেড়ে দেবেন, তবে কারও কাছেই সরকারের অনুমতি কিংবা কোনো ডিসিআর নেই। কিছু দোকান ইট দিয়ে পাকাপোক্ত ও কিছু টিন কঠের জরাজীর্ণ অবস্থায় বন্ধ দেখা যায় ও একটি দোকান সংস্কার কাজ চলমান। ভুক্তভোগী মোসলেম সিকদার ও ছয়জদ্দীন মোল্লা বলেন, আমাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তিসহ খাস জমি দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা।

    আমরা বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো ফল পাইনি। দ্রুত খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার এবং চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত করার জন্য সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করি। থানার অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই তুষার বলেন, অভিযোগের বিষয় তদন্ত করতে বিকেলে (শুক্রবার) ঘটনাস্থলে যাবো। তদন্তের পর বিস্তারিত জানাতে পারবো। ইউনিয়ন তহশিলদার মো. ওয়াহাব মিয়া বলেন, এলজিডির রাস্তার পাশের জমিটি খাস নাকি আমি জানি না।

    ম্যাপ দেখতে হবে। জমিটি নিয়ে একটা বিরোধ আছে শুনেছি। আগামী সোমবার কাগজপত্র দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কেউ যদি এখন দোকানঘর নির্মাণ করে কাজ বন্ধ করে দিবো। গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, আমি উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। বর্তমানে ট্রেইনিং এ আছি। আগামী মঙ্গলবার অফিসে ফিরে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    শনিবার ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

    অনলাইন ডেস্ক: বিতরণ লাইন মেরামত ও ট্রান্সফরমারের জরুরি সংস্কারকাজের জন্য সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ...