ইউরোপে ভালো জীবনের স্বপ্ন পূরণের আশায় সাগরপথে যাত্রা করা বরিশালের ৩৮ জন যুবকের খোঁজ মিলেছে লিবিয়ার কারাগারে। নিখোঁজ হওয়ার পর গত ১১ দিন ধরে তাদের পরিবারের সদস্যরা চরম অনিশ্চয়তা ও হতাশার মধ্যে দিন কাটালেও অবশেষে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ইতালি প্রবাসী জাকির হোসেন মোল্লার মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার বার্থী ও খাঞ্জাপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন গ্রামের এই যুবকরা ওমরা হজের ভিসায় সৌদি আরব গিয়ে দালাল চক্রের মাধ্যমে চোরাই পথে লিবিয়ায় প্রবেশ করেন। সেখান থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বেনগাজী উপকূল থেকে গেমিং বোর্ডে চেপে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তারা। কিন্তু যাত্রাপথেই লিবিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নৌকাটি আটক করে।
এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে তাদের সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে স্বজনরা ধরে নেন, তারা হয়তো আর জীবিত নেই। কিন্তু বুধবার দুপুরে জাকির হোসেন দালাল সিন্ডিকেটের এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন—৩৮ যুবকই লিবিয়ার কারাগারে আটক আছেন। এ খবর জানার পর স্বজনদের মধ্যে স্বস্তি ফিরলেও শঙ্কা কাটেনি।
এদিকে আটকদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন—বার্থী গ্রামের আমিনুল ইসলাম, রহিম হাওলাদার, অহিদুল হাওলাদার, সুজন খান, সবুজ মোল্লা, বড় দুলালী গ্রামের রাহুল সরদার, শাহ আলী বয়াতী, বাবুল বেপারী, তানভির হোসেন হৃদয়, মাসুদ তালুকদার, রাব্বী সরদার, রিয়াজুল বেপারী, বিপুল সরকার, শাহাদাত সিকদার, রিমন মীর, তৌহিদ হাসান হৃদয়সহ আরও অনেকে।
জানা গেছে, ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর এই যুবকেরা দালাল সিন্ডিকেটকে গড়ে ১৫ লাখ টাকা করে দিয়েছেন। সহায়-সম্পদ বিক্রি, ঋণ ও ধার করে তারা অর্থ জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু ইউরোপের স্বপ্ন ভেঙে এখন তারা লিবিয়ার জেলে বন্দি।
একজন আটক যুবকের মা নাজমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলে বলেছিল মা, আর কষ্ট করতে হবে না। কিন্তু এখন সে কোথায় আছে, কেমন আছে আমি জানি না। বুকের মানিককে না পেলে আমার আর কিছুই রইল না।”
স্থানীয়রা জানান, এ ধরনের প্রতারণা ও দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রোধে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।