More

    নির্বাচন ঘিরে ভুয়া ভিডিও-তথ্য বাড়ছে, প্রশ্ন ইসির সক্ষমতায়

    অবশ্যই পরুন

    আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) নেতিবাচক প্রভাব বাড়ছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেয় করার পাশাপাশি গুজবের মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। এ জন্য এআই দিয়ে ডিপফেক ভিডিও ও বিকৃত ছবি প্রতিনিয়ত সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে।

    নির্বাচন কমিশন (ইসি) এআইর অপব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে একে হুমকি মানলেও সাংবিধানিক সংস্থাটি আছে কার্যত হাত গুটিয়ে। আরপিও সংশোধনে এআই যুক্ত করলেও ইসির এ-সংক্রান্ত অপব্যবহার ঠেকানোর উদ্যোগ আলোচনার পর্যায়ে আটকে আছে।

    এআইর অপব্যবহার সামলাতে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, দেশে প্রায় আট কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এবং তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, সক্রিয় বেশির ভাগ ব্যক্তি ডিজিটাল জগতের তথ্য যাচাইয়ে অভ্যস্ত নন। পছন্দের কিছু পেলেই বাছবিচার ছাড়া বিশ্বাস করেন এবং তা ছড়িয়ে দেন। ফলে একটি ভুয়া তথ্যেও কোটি কোটি মানুষ প্রভাবিত হন।

    নির্বাচন কমিশন এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা-গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন রাজনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা। সাইবার নিরাপত্তা-বিষয়ক প্রশিক্ষক আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, ডিপফেক শনাক্তে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি। সংবাদমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেকিং প্ল্যাটফর্মকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে হবে। সবচেয়ে বেশি জরুরি জনগণের প্রযুক্তি সাক্ষরতার হার বাড়ানো।

    ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি
    গবেষণা সংস্থা ডিসমিসল্যাব সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, চলতি বছর শুধু মে-জুন দুই মাসে দেশে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৪ শতাংশই রাজনীতি-সংক্রান্ত। ফেসবুকের পাশাপাশি ইউটিউব, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ ও এক্স হ্যান্ডলে ব্যাপক হারে ছড়ানো হচ্ছে এআই জেনারেটেড কনটেন্ট। নারীনেত্রীদের চরিত্র হননে এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ভুয়া ভিডিও। একাধিক টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের লোগো ব্যবহার করে ১৭৬টি ভুয়া গ্রাফিক্স কার্ড ছড়ানো হয়, যার ৮৫ শতাংশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।

    ডিসমিসল্যাবের মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, নিয়মের মধ্যে থেকে এআইকে নির্বাচনের প্রচারে কাজে লাগানো যেতে পারে। এতে আর্থিকভাবে দুর্বল দলগুলোর সুবিধা হবে।

    বিশ্বের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশ
    যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জো বাইডেনকে লক্ষ্য করে ডিপফেক ভিডিও ছড়ানো হয়। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে শতাধিক প্রার্থীর নামে ভুয়া প্রচার চালানো হয়। রোমানিয়ায় এআইর মাধ্যমে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই বাতিল করা হয়। কানাডার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নামেও ছড়ানো হয় ভুয়া তথ্যের ছবি-ভিডিও। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এআইর অপব্যবহার ঠেকাতে আইন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত ও চীন এআই নিয়ন্ত্রণে পৃথক নীতি বাস্তবায়ন করেছে।

    বাংলাদেশে এআই-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ আইন না থাকায় ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল, এআই নীতিমালাসহ বিভিন্ন বিধিবিধান তৈরির উদ্যোগ হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

    রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবনা
    ভুয়া ভিডিও, অপতথ্যের সবচেয়ে ভুক্তভোগী রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু তারা নিজেরা বিষয়টি প্রতিরোধ না করে সরকারের সহায়তায় নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগী হতে পরামর্শ দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন বলেন, এআইর অপব্যবহারে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে; দলগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কে প্রভাব পড়ছে। নারীরা রাজনীতির প্রতি নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এসব ঠেকাতে ইসির উদ্যোগ দরকার।

    বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, এখনই প্রতিরোধ করা না গেলে জাতীয় নির্বাচনে মহামারি আকার নেবে এআইর অপব্যবহার। এটি নিয়ন্ত্রণে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

    জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, এ-সংক্রান্ত প্রযুক্তি ও জনবল কেবল সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রয়েছে। তাদের সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

    উদ্বিগ্ন ইসি, নেই কার্যকর উদ্যোগ
    নির্বাচনের আগে প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে শঙ্কিত ইসি। ইসির সংশোধিত আচরণবিধির চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারসহ যে কোনো বিষয়ে এআই ক্ষতিকর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণ্য বক্তব্য, ভ্রান্ত তথ্য, বিকৃত মুখ, মিথ্যা তথ্য প্রচারসহ ক্ষতিকর কনটেন্ট তৈরি বা প্রচার নিষিদ্ধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। জরিমানা ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা করা হয়েছে।

    ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচনী প্রচারে এআইর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম এআইয়ের এমন কোনো ব্যবহার করা যাবে না, যা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে।

    ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, আচরণবিধিতে এআই-সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এখানে আইনি দুর্বলতা বড় সমস্যা। সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

    ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, অনলাইনভিত্তিক অপপ্রচার ও অপতথ্য ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে মনিটরিং টিম গঠন বা অন্য কোনো উপায় বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

    ইসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন
    তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির জানান, ডিপফেক ভিডিও মুহূর্তে লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারে। নির্বাচনের মতো স্পর্শকাতর সময়ে এটি ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। এ জন্য আচরণবিধিতে এআই ব্যবহারের বিষয় স্পষ্ট করা ও এর সঠিক প্রয়োগ দরকার।
    নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি বলেন, ইসির নিজস্ব কোনো নির্বাচনী সাইবার সিকিউরিটি সেল, শাখা বা ইউনিট নেই।
    ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দিন শিশির বলেন, ডিপফেক ভিডিও, অপতথ্য চিহ্নিত করার সক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই। এ জন্য প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ

    একটি অপতথ্য দু-এক ঘণ্টার মধ্যে
    নির্বাচনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। দ্রুত এটি চিহ্নিত করা না গেলে মনিটরিং সেল গঠন করে কোনো লাভ হবে না।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    বাংলাদেশের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা

    প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের সব ধরনের ক্রয় ও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ করার উদ্যোগ নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের...