রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন কারণে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড। বেশি ইমেজ সংকটে ফেলেছে চাঁদাবাজির অভিযোগ। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের ভরাডুবির জন্য বিতর্কিত কর্মকাণ্ডকেই দায়ী করেছেন খোদ নিজ দলের নেতারাও। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের আস্থা ফেরাতে এখন জনকল্যাণমূলক কাজে মনোযোগ বিএনপির।
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় সাত হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাতেও খুব আস্থা ফেরেনি মানুষের। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফল সামনে রেখে এবার দলটি ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে জোর দিচ্ছেন দলটির নেতারা।
রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কাজ করা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শ বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। সে আদর্শ মাথায় রেখে সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খাল পরিষ্কার কার্যক্রম, বিভিন্ন জেলায় বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প, শ্রমজীবী মানুষের সহায়তা ও তরুণদের মাদকমুক্ত রাখতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করেছে। এসব উদ্যোগ সামনে রেখে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার ও ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে কাজ করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
নতুন করে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, যেহেতু সামনে নির্বাচন সেহেতু জনগণের কাছে ভোট চাওয়া। এটা একটা নতুন কর্মসূচি হতে পারে। জনগণের সঙ্গেই জনগণের দল আছে।- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু
জনকল্যাণমূলক কাজে বিএনপি
কয়েক মাস ধরেই এমন কর্মসূচি হাতে নিলেও ডাকসু নির্বাচনের পর থেকে এগুলোতে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সম্প্রতি ঢাকার উত্তরা এলাকায় আয়োজন করা হয় খাল পরিষ্কার কর্মসূচি। উত্তরা-১৫ নম্বর সেক্টরের অফিসার্স ক্লাব সংলগ্ন ২ নম্বর ব্রিজ ও এ-ওয়ান সংলগ্ন ৫ নম্বর ব্রিজের পাশের খালে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করেন দলটির নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায়ও খাল পরিষ্কার কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। দলটির কয়েকশ নেতাকর্মী এ কাজে অংশ নেন। স্থানীয় ওয়ার্ড ও থানা কমিটির নেতারাও উপস্থিত থেকে খাল পরিষ্কার করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলোতেও নেতাকর্মীদের প্রতি এ বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের কল্যাণে মে দিবস উপলক্ষে তারেক রহমান শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি জানান, ক্ষমতায় গেলে শ্রম আইন সংস্কার, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া শ্রমিকদের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
স্বাস্থ্যখাতে কাজের অংশ হিসেবে দলীয় ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে সম্প্রতি রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় আয়োজন করা হয় মেডিকেল ক্যাম্প। এসব ক্যাম্পে সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়। দরিদ্র পরিবারের অনেকে এসব উদ্যোগ থেকে উপকৃত হচ্ছেন। যুবসমাজকে মাদক ও অপরাধ থেকে দূরে রাখতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে বিএনপি। তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি।
আমরা এসব অপপ্রচারের জবাব হিসেবে যত বেশি সম্ভব ভালো কাজ করে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কাজের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের যে কর্মসূচিগুলো ছিল, সেগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করছি।-জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুনুর রশীদ
তারেক রহমান সম্প্রতি তার এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, সময়ের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিএনপি সব সময়ই নিজেকে আধুনিকায়ন করেছে। আমরা জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ও যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, তরুণদের কর্মসংস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও ডিজিটাল উদ্ভাবনের প্রতিশ্রুতিসহ ৩১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে আমাদের নীতিমালা গড়ে উঠেছে। আমরা চাই বিএনপির পরিচয় হোক সেবা, ন্যায়বিচার ও দক্ষতার প্রতীক হিসেবে, বিভাজন কিংবা সুবিধাভোগের প্রতীক নয়।
জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিএনপি জনগণের দল। তারা সব সময়ই জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। বহু বছর ধরেই তারা জনগণকে নিয়ে কাজ করছে। জনগণের সুবিধা-অসুবিধা, ভালো-মন্দের সঙ্গে ছিল। এ কারণে বিগত সময়ে সরকারের শত নির্যাতন, মামলা-হামলার পরও বিএনপি কিন্তু এখনো টিকে আছে।’
তিনি বলেন, ‘এটা মানুষের ভালোবাসা-সমর্থনের কারণে সম্ভব হয়েছে। সে কারণে নতুন করে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, যেহেতু সামনে নির্বাচন সেহেতু জনগণের কাছে ভোট চাওয়া। এটা একটা নতুন কর্মসূচি হতে পারে। জনগণের সঙ্গেই জনগণের দল আছে।’
নির্বাচন ঘিরে আমরা ধানের শীষের বার্তা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিএনপি খাল পরিষ্কার কর্মসূচি দিয়েছে। দল যেহেতু ক্ষমতায় নেই তাই খাল খননের ব্যাপারটা আসছে না।- নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য আকরামুল হাসান
ভোটার বাড়াতে সামনে বিএনপির কর্মসূচির ধরনগুলো কেমন হওয়া উচিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যারা ইলেকশন করবে তারা কাজ করতেই ব্যস্ত আছে। প্রতিদ্বন্দ্বী যারা আছেন পরস্পর সবাই এখন মানুষের কাছে যাচ্ছেন। তারা ধানের শীষ মার্কার ভোট চাচ্ছেন। স্বাভাবিক কারণেই তারা গ্রামকেন্দ্রিক বা তার সমাজকেন্দ্রিক মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য নানান কর্মসূচিতে অংশ নেবে। সেটা মতবিনিময় হতে পারে, ঘরে ঘরে যাওয়া হতে পারে, মিলাদ, জানাজা বা আগে যেসব বিষয়গুলো করা সম্ভব হয়নি সেগুলো তারা করতে পারে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, ‘খাল পরিষ্কারের মতো কর্মসূচিগুলো মূলত সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করার কথা। কিন্তু বিএনপি যেহেতু সাধারণ মানুষের দল, সেহেতু কর্মসূচি হিসেবে জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মকাণ্ডগুলোই করে। যেমন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পসহ অন্য যে জনবান্ধব কর্মসূচি রয়েছে, এগুলো আমরা ধারণ করছি। সেটাকে আমরা শতভাগ চেষ্টা করছি ইউটিলাইজ করার জন্য। সেজন্য সেখানে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও সঙ্গে নিচ্ছি, আমাদের নেতাকর্মীরাও যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘১৭ বছর আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। আর আমরা জনগণের দল হিসেবে জনগণকে কাছে রেখে, পাশে থেকে তাদের সঙ্গে প্রত্যেকটি কাজের অংশীদার হিসেবে আমরা থাকতে চাই।’
দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বিএনপি সব সময় জনগণের দল হিসেবেই পরিচিত। তারা জনগণের কাছে থাকার জন্য সব সময়ই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন অপশক্তি সমন্বিতভাবে দলের বিপক্ষে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এসব অপপ্রচারের জবাব হিসেবে যত বেশি সম্ভব ভালো কাজ করে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কাজের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে আমরা জিয়াউর রহমানের যে কর্মসূচিগুলো ছিল, সেগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করছি।’
নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য আকরামুল হাসান বলেন, ‘নির্বাচন ঘিরে আমরা ধানের শীষের বার্তা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিএনপি খাল পরিষ্কার কর্মসূচি দিয়েছে। দল যেহেতু ক্ষমতায় নেই তাই খাল খননের ব্যাপারটা আসছে না। আমরা জিয়াউর রহমানের শেখানো পদ্ধতিতে খরা প্রতিরোধে সামাজিক বনায়ন, বৃক্ষরোপণ, উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, দরিদ্র মানুষদের কৃষি সহায়তার মতো কর্মসূচিগুলো করতে পারি।’
তথ্যসূত্র:জাগো নিউজ