More

    পটুয়াখালীতে ডেঙ্গুর ছোবলে উপকূল, কিট সংকটে ঝুঁকিতে রোগীরা

    অবশ্যই পরুন

    শহর ছাপিয়ে এখন সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় তীব্র আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। এরই মধ্যে আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবায় দেখা দিয়েছে নানা সংকট। গত ৪৮ ঘণ্টায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদিকে চিকিৎসকসহ ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট আর স্যালাইন সংকট থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম।

    পরিসংখ্যান বলছে, গত ৪ মাসে কেবল কলাপাড়া হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ৪৭১ রোগী। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, কলাপাড়া হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডসহ এখন সব বেডেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা। তবে একটি বেডেও মশারি টানানো নেই। অনেকে জানান, এ হাসপাতালে রোগী দেখতে এসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গত কয়েকদিনে ১২টি মশারি চুরি করে নিয়ে গেছে।

    আর বিভিন্ন অজুহাতে মশারি টানান না রোগীরা। এদিকে তীব্র আকারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চলছে মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডেই অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশ। সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী। হাসপাতালের নার্সরা জানান, প্রতিদিন আউটডোর থেকে রোগীদের জন্য নিয়ে আসা মাত্র ডাবের খোসার সংখ্যাও ২০০ ছাড়িয়ে যায়, যা একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী কিছুতেই সামাল দিতে পারছেন না।

    ফলে অপরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধময় পরিবেশেই স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন শত শত মানুষ। অপরদিকে শনাক্তকরণ কিট (আইজিজি আইজি এম) সংকটে ভুগছেন জরসহ ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীরা। আর স্যালাইন সরবরাহ না থাকায় বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীদের। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী নীলগঞ্জ ইউপির নিচকাটা গ্রামের বাসিন্দা বিষ্ণু খরাতি বলেন, এটি এখন হাসপাতাল নয়, মরণ আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ফ্লোরে, বাথরুমে দুর্গন্ধযুক্ত পানি।

    আর ডাক্তার না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালের মধ্যেই বহু ডেঙ্গু মশা রয়েছে। মহিপুর সদর ইউপির নজীবপুর গ্রামের বাসিন্দা ডেঙ্গু আক্রান্ত খোকন মৃধা বলেন, সুস্থ হতে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি কিন্তু এখানেই মশা-মাছি ভনভন করছে। ডাক্তার নেই, আবার পরিচ্ছন্ন কর্মীর সংকট থাকায় যত্রতত্র ময়লা থাকায় মশা জন্ম নিচ্ছে।

    আলীপুরের বাসিন্দা ডেঙ্গু আক্রান্ত আবদুল খালেক বলেন, আমি ভর্তি হয়ে শুনেছি এখানে রোগী দেখতে এসে রাতে থাকার পর মানুষজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। তবে মশারি কেন টানানো হচ্ছে না জানতে চাইলে রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালের বৈদ্যুতিক পাখা অনেকগুলো অচল। তাই গরমে কেউ মশারি টানাতে চায় না। হাসপাতালের সিনিয়র নার্স মোর্শেদা বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অধিকাংশ রোগী আসছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে।

    কিন্তু ডাক্তার মাত্র দুজন, আমাদের অনেক নার্স এখন ডেঙ্গু লক্ষণ নিয়ে জ্বরে আক্রান্ত। অতিরিক্ত সেবা দিতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হচ্ছেন। লোকবল সংকটে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ তীব্র আকার ধারণ করেছে। আমাদের হাসপাতালে ৩৬ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করার কথা। আমিসহ চিকিৎসক আছি মাত্র তিনজন।

    পাঁচজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর জায়গায় কাজ করছে মাত্র একজন। তিনি আরও বলেন, সেবার মান বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে। তার মধ্যে কিট ও স্যালাইন সংকট থাকায় রোগীদের বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। রোগীদের বিষয়ে ডা.শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে কেউ মশারি টানাতে চায় না। এ ছাড়া ১২টি মশারিসহ চেয়ার পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে গেছে। তবুও ডেঙ্গুর প্রকোপ সামাল দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    গলাচিপা-হরিদেবপুর ফেরি ও খেয়াঘাট সংস্কারে ছয় দফা দাবিতে মানববন্ধন

    স্টাফ রিপোর্টার: পটুয়াখালীর গলাচিপা-হরিদেবপুর ফেরি ও খেয়াঘাট সংস্কারের ছয় দফা দাবিতে সর্বস্তরের সাধারণ জনগণের আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।...