সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের লোগো ব্যবহার করে ভিজিটিং কার্ড ছেপেছেন। দুজন সহযোগী তার সঙ্গে রাখেন। এসব কারণে সহজেই মানুষ তাকে বিশ্বাস করেন। একপর্যায়ে তিনি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন। পরে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
এভাবে রাতারাতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। বরিশালের আগৈলঝাড়ায় চাকরি দেওয়ার নামে বেকার তরুণ ও যুবকদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন বিষ্ণুপদ হালদার নামে এক শিক্ষক। প্রতারণা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। র্যাব-৩ এর সদস্যরা ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বুধবার আগৈলঝাড়া থানায় হস্তান্তর করে।
বিষ্ণুপদ হালদার উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামের রমেশ চন্দ্র হালদারের ছেলে। তিনি স্থানীয় ছয়গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পুলিশ জানায়, বিষ্ণুপদ দীর্ঘদিন নিজ গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের অনেককে বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। চাকরি ও টাকা ফেরত না পেয়ে কালাচাঁদ মজুমদার নামে এক যুবক ১৫ লাখ টাকা আদায়ের জন্য বরিশাল আদালতে ২০২৩ সালে বিষ্ণুপদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। প্রতারণা মামলায় সাজা হওয়ায় চাকরিচ্যুত হন তিনি। এর পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান। আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল গ্রামের বাসিন্দা চায়ের দোকানদার মিজানুর রহমান জানান, তার ছেলেকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২০২০ সালে ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেন বিষ্ণুপদ। পরে ছেলেকে সেনাবাহিনীর ভুয়া নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ড দেন।
এখনও টাকা ফেরত পাননি তিনি। আগৈলঝাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রতন কুমার হালদার জানান, তার স্ত্রীকে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিষ্ণুপদ ২০২০ সালে ৮ লাখ টাকা নেন। কিন্তু স্ত্রীর চাকরি ও টাকা কোনোটাই ফেরত পাননি তিনি। এভাবে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে উপজেলা সদরের দীপংকর বৈরাগী, বাকাল গ্রামের অনিতা মজুমদার ও নিমাই মজুমদার, ঐচারমাঠ গ্রামের কংকন হালদার, ছবিখারপাড় গ্রামের মিলন বাড়ৈ প্রমুখে কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি।
ফুল্লশ্রী গ্রামের ব্যবসায়ী নির্মল দাসের অভিযোগ, তার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করেননি বিষ্ণুপদ। অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বিষ্ণুপদ হালদারের ছোট ভাই বিপুল হালদার বলেন, তার ভাই অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের আগৈলঝাড়া উপজেলা সভাপতি এইচ এম মাসুদ হাওলাদার বলেন, শিক্ষকতা পেশাকে মানুষ সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। বিষ্ণুপদ হালদারের প্রতারণার ঘটনা শিক্ষক সমাজের জন্য কলঙ্ক ও লজ্জাজনক। অভিযোগ রয়েছে, তার প্রতারণার কারণে আগৈলঝাড়ার বহু পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে, কেউ বিক্রি করেছে জমি, কেউ নিয়েছে ঋণ।
বর্তমানে ভুক্তভোগীরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. অলিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিষ্ণুপদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলার সাজাসহ আগৈলঝাড়া থানায় ৬টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে ‘
