বঙ্গোপসাগরের যে তীরভূমি থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অনন্য দৃশ্য দেখা যায়, সেই কুয়াকাটার সৌন্দর্য ফিকে হতে বসেছে দূষণ আর অব্যবস্থাপনায়। ‘সাগরকন্যা’ হিসেবে পরিচিত এ পর্যটন কেন্দ্রে সম্প্রতি গিয়ে দেখা গেল, কয়েকটি ঝাউগাছ ভেঙে পড়ে আছে সৈকতের এক অংশে। আর জিরো পয়েন্টে বা মূল অংশে বালুক্ষয় রোধে দেওয়া জিও ব্যাগের ফাঁকফোকড়ে উঁকি দিচ্ছে ফেলনা প্লাস্টিকের বোতল-আবর্জনা।
সৈকতেই বসেছে সারি-সারি অস্থায়ী দোকানপাট। জিরো পয়েন্টে প্রবেশের সময় ঠিক ডানপাশেই একসময় গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনার কংক্রিটের জঞ্জাল পড়ে রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। সেগুলোর টুকরো আবার ঢেউয়ের তালে তালে এসে জমছে সৈকতে। সাগরপাড়ে রয়েছে জিও ব্যাগের সারি; কোথাও কোথাও ফেটে বের হচ্ছে বালু।
আবার শ্যাওলাধরা পিচ্ছিল এসব ব্যাগে পড়ে পর্যটক আহত হচ্ছে হরহামেশাই। সৈকতের এ বেহাল দশায় পর্যটক দেখা গেছে কমই। এক সময়ের অপরূপ এ সৈকতের মোহে অনেকে এখন এসে হতাশ। বিরক্ত হয়ে কেউ কেউ বলেই বসছেন, আর আসতে চান না এখানে। আকৃষ্ট হওয়ার কী আছে ঢাকা থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুয়াকাটা সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার। পূবের গঙ্গামতি বন থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায় সবচেয়ে ভালো।
শীতের সময় নানা প্রজাতির অতিথি পাখির দেখা মেলে এ সৈকতে। রয়েছে শুটকিপল্লি, খোলামেলা পরিবেশ। তার সঙ্গে সমুদ্রের ঢেউ আর ঝাউবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
কুয়াকাটার নামকরণের বিষয়ে বাংলাপিডিয়ার নিবন্ধ বলছে, বর্মিরাজা ১৭৮৪ সালে রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করলে হাজার হাজার রাখাইন মাতৃভূমি ছেড়ে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। তারা বড় বড় নৌকায় বঙ্গোপসাগরের তীরভূমি রাঙ্গাবালীতে এসে অবতরণ করেন, গড়ে তোলেন বসতি। সাগরের নোনা পানি ব্যবহার ও খাওয়ার অনুপযোগী বলে রাখাইনরা বালুর মধ্যে কূপ বা কুয়া খনন করে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ শুরু করেন। কুয়া খনন করে সুপেয় পানি পাওয়ায় তারা নাম দিয়েছিলেন কুয়াকাটা।
পর্যটকদের এখন সেখানে গিয়ে রাখাইন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পেতে পারেন। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, আদিবাসীদের বসতি, বৌদ্ধ মন্দির আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে কুয়াকাটা তীর্থ স্থান। রাস পূর্ণিমা ও মাঘী পূর্ণিমাতে সৈকতে স্নানসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করে তারা। কার চোখে কেমন সৈকত মাগুরা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন অরুণ সাহা, তেমন পর্যটন সুবিধা না পেয়ে হতাশা ঝরল তার কণ্ঠে।
অরুণের ভাষ্যে, “আমরা কলকাতার দীঘা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। ওটা অনেক সুন্দর। ওখানে সাগরের পাড়ে ব্লক দেওয়া এবং টাইলস দেওয়া। খুব সুন্দর করে সেখানে বসার ব্যবস্থা আছে। এমনকি কক্সবাজারেও আছে। “কিন্তু কুয়াকাটায় অনেক কিছুই নেই। এটার সৌন্দর্যবর্ধন এবং উন্নয়ন করা দরকার। আমরা যে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আসি; আসার পরে আসলে হতাশই লাগে।” তার স্ত্রী রিম্পি সাহাও বললেন, “এখানে তো সৈকতের অবস্থা ভালো না।
জিও ব্যাগের ওপর দিয়ে নামতেই ভয় করছে। এগুলো পিচ্ছিল হয়ে আছে। কক্সবাজারের তাও ভালোই অবস্থা, এখানের অবস্থা করুণ। আর আসতে চাই না।” সৈকতের দোকানি নূর মোহাম্মদ বলেন, “এখন যেখানে আমরা আছি, একসময় এখান থেকে আরও দুই কিলোমিটার দূর পর্যন্ত সৈকত ছিল। এখন পুরোটাই সাগরের পেটে। দীর্ঘদিন ধরেই এই জায়গাটাতে ভাঙন হচ্ছে। “আমরা আসলে ঝুঁকিতে আছি। যেকোনো মুহূর্তে এই জায়গাটাও ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। আমাদের চাওয়া হচ্ছে যেন পানি উন্নয়ন বোর্ড এদিকে যথাযথ দৃষ্টি দেয়।
” স্থানীয় এ ব্যক্তি বলেন, “এখানে শ্যাওলা ধরা জিও ব্যাগের জন্য পর্যটকরা এসেই প্রায়ই পিছলে পড়ে আহত হন। এখনো পর্যটক আসে; তবে আগের তুলনায় কম।” পর্যটক কম আসায় বিকিকিনি কমেছে বলে জানান নূর মোহাম্মদ। অনেক বছর ধরেই সৈকতে পেশাদার আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করছেন কলাপাড়ার আট নম্বর ওয়ার্ডের আরিয়ান। তিনি বলেন, “এখানে অনেক আগে থেকে ভাঙন চললেও দীর্ঘমেয়াদি কোনো উদ্যোগ আমার চোখে পড়েনি।
এখানে যে বস্তাগুলো আছে, এগুলোর চেয়ে আমার মনে হয় ব্লক ফেলে বা টেকসই বাঁধ দিলে সেটা বরং দীর্ঘস্থায়ী হতো।” আলোকচিত্রী আরিয়ান বলেন, “এই বস্তার কারণে পর্যটকদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। সৈকতে প্রবেশের রাস্তার মাঝে থাকায় এটা আরও বেশি সমস্যা তৈরি করছে। বালুক্ষয়ে সাগর চলে এসেছে কাছে। “আমরা উন্মুক্ত একটা সৈকত পাচ্ছি না, যেখানে এসে পর্যটকরা ছোটাছুটি করতে পারবে। এগুলো (বস্তা) তুলে নিলে সবাই উন্মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারবে। “এখানে সৈকতে ভেঙে পড়া স্থাপনার কংক্রিটও পায়ের নিচে বিঁধে, যাতে আহত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
এগুলো যাতে পুরোপুরি অপসারণ করা হয়।” কলাপাড়া উপজেলার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফারুক বলেন, “সৈকতের একদম পাশেই ঝাউগাছ ভেঙে পড়ে আছে অনেক দিন ধরে। পর্যটকরা হাঁটতে পারে না। এই জিও ব্যাগ দিয়ে আমার মনে হয় কোনো লাভ হয়নি, আর্থিক লাভ ছাড়া।” বালুক্ষয় বহুবছর ধরেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সৈকতের দৈর্ঘ্য কমে আসছে বলে জানালেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের বৃহত্তম বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি মং চো থিন তালুকদার।
তিনি বলেন, “আমরা অনেক বছর আগে যখন এখানে বেড়াতে আসতাম, সেসময়ে এখনকার চেয়ে আরও অন্তত তিন কিলোমিটার সাগরের দিকে যাওয়া যেত। একটা সরকারি ডাকবাংলোও ছিল। সেটাও সাগর গিলে খেয়েছে।”
সৈকতের বালুক্ষয় অনেক বছর ধরেই হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখানে বালুর বস্তা ফেলে ক্ষয়রোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে, ওটা আমার মনে হয় যে খুব একটা কার্যকর না। আরও টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।” কেবল কুয়াকাটায় নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে দেশের উপকূলঘেঁষা শহর, বন, দ্বীপ— সবখানেই ভাঙন বেড়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ভাঙছে উপকূল।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রায় দুই যুগ ধরে পটুয়াখালীতে উপকূল ভাঙছে ‘অস্বাভাবিকভাবে’, বিশেষ করে ২০০৭ সালে ‘সিডর’ আঘাত হানার পর থেকে। আর ভাঙনের কারণে এ পর্যন্ত দুই হাজার একরের বেশি জমি হারিয়ে গেছে, যার ৪০০ একরই ছিল উপকূল রক্ষার জন্য গড়ে তোলা ঝাউবন।
বছর চারেক আগে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেরিন সায়েন্স’-এ কুয়াকাটা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, ১৯৮৯ ও ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর কুয়াকাটায় শূন্য দশমিক ৩২ বর্গকিলোমিটার উপকূলরেখা হটে যাচ্ছে। এসময়ে মোট ১৩.৫৯ বর্গকিলোমিটার জমি ক্ষয় হয়েছে, জেগে উঠেছে ৩.২৭ বর্গকিলোমিটার। জিও ব্যাগ কি সৈকতের ক্ষয়রোধে সক্ষম? পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জিও ব্যাগ কি সৈকতের ভাঙন রোধে সক্ষম— এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা, ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষারের কাছে। বহু বছর ধরেই সাংবাদিকতা ও পরিবেশ বিষয়ক কর্মকাণ্ডে যুক্ত তিনি।
তুষার বলেন, “এই বিষয়টি নিয়ে আমরাও অস্বস্তিকর অবস্থায় আছি। আমাদেরও এখানে ক্ষোভ-হতাশা আছে। এখানে বেশ কয়েকবছর ধরেই বালু ক্ষয় হচ্ছে। সেটা রোধ করার জন্য সৈকত রক্ষা প্রকল্প হওয়ার কথা. যেটা দীর্ঘদিনের দাবি ছিল আমাদের। “কিন্তু সৈকত রক্ষার নামে বাণিজ্যিক একটা ধান্দা হয়ে আসছে কয়েক বছর ধরে। এটা পাউবো করছে; এর সঙ্গে আরও অনেকেই সম্পৃক্ত আছে। তাদের হাত এত লম্বা যে তারা এটা ম্যানেজ করে ফেলে। প্রত্যেক বছর বর্ষা আসলেই জিও ব্যাগের একটা খেলা খেলে। এবং এটা করে এমন একটা সময়ে, যখন আবহাওয়াটা খারাপ হয়ে যায়।
তখন তাৎক্ষণিক বরাদ্দের মাধ্যমে।” জিও ব্যাগ দেওয়ার পেছনে অর্থ তছরূপই মূল কারণ দাবি করে তুষার বলেন, “একবছর এই ব্যাগ ফেলতে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হল। আমরা তখন সংবাদ পেলাম যে, ৫০ থেকে ৫২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে মোটের ওপর। তখন থেকেই আমরা এটার বিরুদ্ধে কথা বলে আসছি।”
কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির এ সদস্য বলেন, “আমার কাছে মনে হয় জিও ব্যাগ ফেলার মূল কারণ হচ্ছে— এটার খরচ অনেক বেশি, কিন্তু অনেক কম সময়ে (১৫ দিনের ভেতর) কাজ হয়ে যায়।” জিও ব্যাগের পরিবর্তে বিকল্প কোনো প্রস্তাব দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তুষার বলেন, “আমাদের প্রস্তাব ছিল— সৈকত রক্ষার জন্য জিও ব্যাগের পরিবর্তে একটা নান্দনিক এবং টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার, যেটা দ্বারা সৈকতের বালুক্ষয় রোধ হবে।
“আবার দেখতেও নান্দনিক হবে। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে পাউবো তাৎক্ষণিকভাবে সৈকত থেকে বালু তুলে আবার সেখানেই বসায়।” তিনি বলেন, “এখানে (কুয়াকাটা) যেটা হয়, সেটা হচ্ছে বালুক্ষয়। সৈকতে গাছের গোড়া থেকে তিন ফিট বালু সরে গেলেই গাছ পড়ে যায়। “সৈকতের ঠিক দুই দিকে দুটো নদী আছে, আন্ধারমানিক এবং আগুনমুখা।
দুই দিকে নদী থেকে পানি প্রবেশের কারণে এখানে স্লাব আকারে বালুর যে গোলাকার আকৃতি আছে, এটার মূল পয়েন্ট থেকে বালুক্ষয় হতে হতে এ অবস্থায় এসেছে এখন।” তুষারের পরামর্শ, কক্সবাজারে এখন একটা প্রকল্প চালু আছে ‘কোস্টাল প্রটেকশন’ প্রোগ্রাম নামে। সেটির আদলে কুয়াকাটাতেও কাজ করা যেতে পারে। তিনি দাবি করেন, এত বছর ধরে জিও ব্যাগ ফেলতে ফেলতে সৈকতের ৩০০ থেকে ৫০০ ফুট পর্যন্ত তা ছড়িয়ে গেছে। ছেঁড়া, শ্যাওলাযুক্ত, পঁচা, নোংরা এসব ব্যাগে পুরো সৈকত বিবর্ণ হচ্ছে।
তুষার বলেন, “এই জিও ব্যাগে পড়ে পর্যটক প্রতিনিয়ত আহত হচ্ছে, নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এর পরও জিও ব্যাগ থেকে পাউবো বের হতে পারে না। এর সঙ্গে স্থানীয় কিছু অসাধু সংবাদকর্মী, রাজনীতিবিদ এবং প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মী জড়িত আছেন। “ভাগযোগ করে খাওয়ার জন্যই জিও ব্যাগ খেলা। এভাবে কখনোই সৈকত রক্ষা হবে না। আর জিওব্যাগ যদি দিতেই হয়, তাহলে মোটাবালু দিয়ে জিও ব্যাগ প্রস্তুত করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে টেকসইভাবে দিতে হবে।”
সরকারি সংস্থাগুলো যা বলছে জিও ব্যাগের বদলে কংক্রিটের ব্লক ফেলার দাবি তুলেছেন স্থানীয়দের কেউ কেউ। তবে সেটি হলেও ঝুঁকি থেকে যায় বলে মনে করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, “এখানে ব্লক দেওয়া হলে তো সেখানেও শ্যাওলা জমে আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। এখানে কিছু টেকনিক্যাল ইস্যুও আছে। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে দেখব।” কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, “আমাদের একটা মহাপরিকল্পনা আছে। সেই পরিকল্পনায় যতগুলো এরই মধ্যে স্বীকৃত পর্যটনকেন্দ্র আছে, এর বাইরেও অনেকগুলো স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। “সবগুলোকে কীভাবে আরও পর্যটনবান্ধব করা যায়, সেটা ওই পরিকল্পনায় আছে। এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের বাকি। সেটা হলেই আমরা কাজ শুরু করে দেব।” তিনি বলেন, “শুধু ট্যুরিজম বোর্ড চাইলেই সব কিছু করতে পারে না।
সেখানে অন্যান্য অংশীজনদেরও ভূমিকা আছে। যাই হোক, আমরা সবাই একসাথে হয়েই কাজ করব। আর সমুদ্র সৈকতের অব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমি খবর নেব।” বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পর্যটন অনুবিভাগ) ফাতেমা রহিম ভীনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমি নিজে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব।
ওখানকার ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্বটা জেলা প্রশাসকের। “আপনি যে তথ্য দিয়েছেন, এটা আমার কাজে লাগবে। আমি অবশ্যই দেখব।” পরে সৈকতের অব্যবস্থাপনার কিছু ছবি চান তিনি। ছবি পাঠানো হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সরকারের এই কর্মকর্তা। যা বলছে স্থানীয় প্রশাসন সৈকতের ব্যবস্থাপনার প্রশ্নে কথা হয় পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে। গত ২ অক্টোবর কথা বলার সময় তিনি বললেন, সম্প্রতি জেলার দায়িত্ব নিয়েছেন।
“আমি আসার পরে ওখানে (সৈকতে) গিয়েছি। ওখানে যারা অংশীজন আছে, তারা বেশ কিছু সমস্যার কথা বলেছেন; সম্ভাবনার কথাও বলেছেন। সেটা মাথায় রেখে কাজের পরিকল্পনা করেছি আমরা। হয়ত একটু সময় লাগবে।”
জেলা প্রশাসক বলেন, “আমরা তাদের কাছে প্রস্তাব চেয়েছি যে— আপনারা আসলে কেমন করে সাজাতে চান। কারণ আমরা অংশীজনদের পরামর্শমূলক অংশগ্রহণে বিশ্বাসী। “সেক্ষেত্রে ওই এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং পর্যটকরা যে ধরনের পর্যটন চায়, তার যাতে সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটে, এটা মাথায় রেখে আমরা এগোব।” সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওখানে তালিকার বাইরে কিছু হোটেল আছে, ওইগুলোকে আমরা তালিকায় নিয়ে আসব; যেন পর্যটকরা হয়রানির শিকার না হয়, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা- এটা হচ্ছে প্রথম।
“আমরা কোনো কংক্রিটের অবকাঠামো তৈরি করতে চাই না। আবার পর্যটনের ক্ষতি হয়ে যাবে, সেটাও আমরা চাই না। আমরা চাই সুষম উন্নয়নের ভিত্তিতে একটা ইকো-ট্যুরিজম, সেটা পর্যটকবান্ধবও হতে হবে।” জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমরা ‘ব্লেন্ডেড উইথ নেচার’ এরকম কিছু করতে চাই। ছোটখাটো কিছু রেস্ট হাউজের পরিকল্পনা আছে আমাদের। এছাড়া সৈকতে প্লাস্টিকের বর্জ্য কমিয়ে আনতে নিয়মিতভাবে আমরা তদারকি করব।
“আর যে গঙ্গামতির চর আছে, সেখানে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা নেই, আমরা ভ্রাম্যমাণ ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করব। মোট কথা হচ্ছে, সবই পর্যটকের সুবিধার কথা চিন্তা করে করা হবে; একইসঙ্গে যা পরিবেশ-প্রতিবেশেরও ক্ষতি করবে না।”
