More

    প্রশাসনের নীরবতায় দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়েছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওয়াদুদ!

    অবশ্যই পরুন

    সরকারি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ ও বেতন বন্ধ থাকলেও নিয়মিত অফিস করছেন মোঃ আবদুল ওয়াদুদ নামের এক উপসহকারী প্রকৌশলী। অভিযোগ রয়েছে- ঘুষের আশায় তিনি বাকেরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ে প্রতিদিন উপস্থিত হন এবং বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি প্রকল্পের কাজে ভয়ভীতি দেখিয়ে জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেন।

    স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসনের নীরব ভূমিকার সুযোগে প্রকৌশলী ওয়াদুদ দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ উঠলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুমানা আফরোজ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

    দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (ডিডিএম) ‘দুর্যোগ পরিচালনা ও ত্রাণ কর্মসূচি প্রশাসন মন্ত্রণালয়কে শক্তিশালীকরণ (এসএমওডিএমআরপিএ)’ প্রকল্পে ২০১৫ সালে উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পান আবদুল ওয়াদুদ। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলেও তিনি বেতন বন্ধ অবস্থায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন। এদিকে ওই প্রকল্পের অধীনে বা অন্য কোনো সক্রিয় প্রকল্পে তাঁর নিয়োগ না থাকলেও পিআইও অফিসে বসে সরকারি প্রকল্পের কাজ তদারকির নামে জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিয়মিত ঘুষ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

    ২নং চরাদি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য গিয়াস তালুকদার বলেন, “আমার এলাকায় কাবিখা প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে এসে ওয়াদুদ ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে প্রকল্পের বিপক্ষে প্রতিবেদন দেওয়ার ভয় দেখান। পরে বাধ্য হয়ে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়।”

    ১নং চরামদ্দি ইউনিয়নের মেম্বার আরিফ বলেন, “এই ইঞ্জিনিয়ার আসলেই ছ্যাঁচড়া ধরনের মানুষ। প্রকল্পে এলেই টাকা না দিলে বিল কাটার ভয় দেখান।” এ ছাড়া দুর্গাপাশা, নলুয়া, ভরপাশা, রঙ্গশ্রী, পাদ্রি শিবপুর, কলসকাঠি, দুধাল ও কবাই ইউনিয়নের একাধিক ইউপি সদস্য অভিযোগ করেন, ওয়াদুদের সঙ্গে আঁতাত করে কিছু ইউপি চেয়ারম্যান প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই বিল তুলে নিয়েছেন। একই জায়গায় একাধিক প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতেও তিনি সহযোগিতা করছেন।

    একাধিক জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করে বলেন, “উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান এবং ইউএনও রুমানা আফরোজের নীরব সমর্থন ও আশ্রয়ে ওয়াদুদ এসব অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসন যদি শুরুতেই ব্যবস্থা নিত, তাহলে সে এত দূর যেতে পারত না।”

    যোগ করে তারা বলেন, কাগজে কলমে বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পের অর্থ থেকে মোটা অংকের ভাগপান ইউএনও ও (পিআইও)। সে কারনে হয়তো তার বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থাও তারা গ্রহণ করতে পারছেন না। ভুক্তভোগীরা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের দুর্নীতি তদন্তে দুদকের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঠিকাদার জানান, “ডিডিএম-এর এক প্রকল্পের সেতু পরিদর্শনে গিয়ে ওয়াদুদকে খুশি করতে হয়। বিল তুলতেও পিআইও অফিসে ১০ শতাংশ ঘুষ দিতে হয়।”

    স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদাররা মনে করছেন, যদি ইউএনও রুমানা আফরোজ দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন, তাহলে বেতনবিহীন অবস্থায় ওয়াদুর ঘুষ আদায়ের কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব। প্রশাসনের সক্রিয় হস্তক্ষেপ ছাড়া অনিয়ম অব্যাহত থাকবে।”

    ভুক্তভোগী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন উপজেলা প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তারা আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টি লিখিতভাবে দুদক ও জেলা প্রশাসকের কাছে পেশ করবেন এবং সংবাদ মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরবেন। তারা একই সঙ্গে অনুরোধ করেছেন পিআইও অফিসের উপস্থিতি রেজিস্টার, প্রকল্প বিল ও পরিমাপপত্র জনসাধারণের দেখায় দিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তৎপরতার নির্দেশ দেওয়া হোক।

    ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, ইউএনওর সক্রিয় পদক্ষেপ ছাড়া প্রকৌশলী ওয়াদুর দুর্নীতি বন্ধ হবে না।

    অভিযোগ প্রসঙ্গে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও চাকরি স্থায়ী করার কথা আছে। অফিসের প্রয়োজনে আসি।” তবে বেতন বন্ধ থাকা অবস্থায় কেন নিয়মিত অফিস করছেন প্রশ্নে কোনো স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি তিনি।

    উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো জানেন।

    বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আফরোজ বলেন, বিষয়টি জানা ছিলনা। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    আমতলীতে প্রশ্ন ফাঁসে নিয়োগ পরীক্ষা, দাতা সদস্যের ছেলের বউয়ের চাকরি!

    বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের কুতুবপুর ফাজিল মাদ্রাসায় প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে দাতা সদস্যের...