দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড দুই ধাপ বাড়িয়ে ১১তম করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের বর্ধিত গ্রেডে বেতন দিতে বছরে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৮৩১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অতি সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে লিখিতভাবে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়। তার আগে অর্থ বিভাগেও একই ধরনের প্রস্তাব করা হয়।
লিখিত প্রস্তাবের ব্যয়ের তথ্যও তুলে ধরা হয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ডাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতে কর্মবিরতিও পালন করছেন শিক্ষকেরা। শহীদ মিনারের কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক অংশ নিয়েছেন। আগের দিন শনিবার আন্দোলনরত এসব শিক্ষকের ওপর চড়াও হয়েছিল পুলিশ। রাজধানীর শাহবাগে শিক্ষকদের পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিপেটা করে।
পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড এবং জলকামান ব্যবহার করেও শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন। শিক্ষকদের অপর দুটি দাবি হলো শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি এবং চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড দেওয়া। কিছুদিন আগে তাঁরা সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১ তম করার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন।
তবে সেখান থেকে সরে এসে এসেছেন। তবে, প্রাথমিক শিক্ষকদের আরেকটি অংশ অংশ সহকারী শিক্ষক পদটি শুরুর পদ ধরে এই পদে বেতন ১১তম গ্রেডে করা, শতভাগ পদোন্নতি বিভাগীয় প্রার্থীদের মধ্যে দেওয়া ও উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসনের দাবি জানিয়েছিল।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই অংশটি ১ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে তাদের দাবি পূরণে সরকারকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। তবে তারাও আজ শহীদ মিনারে গিয়ে একাত্বতা প্রকাশ করে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকেরা জাতীয় বেতন স্কেলের ১৩ তম গ্রেডে বেতন পান। অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বর্তমান বেতন গ্রেড ১১ তম। সম্প্রতি দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে রিট আবেদনকারী ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়িয়ে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে সারা দেশের সব প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড দশম হওয়ার পথ তৈরি হয়। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
এর পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১ তম গ্রেডে করার বিষয়েও একটি চেষ্টা চলছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এই মুহূর্তে কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১ তম করলে বছরে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৮৩২ কোটি টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এই মুহূর্তে কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১ তম করলে বছরে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৮৩২ কোটি টাকা।ছবি: সাজিদ হোসেন ৪ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে শিক্ষকদের আন্দোলন পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথাও তুলে ধরা হয়। বর্তমানে সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এগুলোতে মোট শিক্ষার্থী এক কোটি ছয় লাখের বেশি। মোট শিক্ষক আছেন পৌনে চার লাখের বেশি। শিক্ষকদের মধ্যে সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১৬টি। তবে বর্তমানে কর্মরত সহকারী শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৫২ হাজার ২০৮ জন।
১৭ হাজার ৮টি পদ শূন্য। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বীকৃতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও দপ্তরের সমমানের যোগ্যতার কর্মকর্তারা ১০ তম গ্রেডে বেতন পান। এ জন্য সহকারী শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের বেতন গ্রেড উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কাজের গুণগত ও পরিমাণগত দিক দিয়ে আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়িয়ে ১০ তম করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সম্মতি দিয়েছেন। তাই যৌক্তিকতা বিবেচনা করে সহকারী শিক্ষকদের বেতনস্কেল ১১ তম গ্রেডে উন্নীত করা প্রয়োজন।
