বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে সৈকত এলাকাজুড়ে দেখা গেছে পর্যটকশূন্য পরিবেশ। হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট সব জায়গাতেই বিরাজ করছে এক ধরনের নিস্তব্ধতা। সাধারণত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়েও কুয়াকাটায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো।
কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে পর্যটকরা ভ্রমণ থেকে বিরত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। হোটেল-মোটেল, ঝিনুক ও আচার মার্কেট, খাবার হোটেল রেস্তোরাঁ, অটোচালক, মোটরবাইক, ফটোগ্রাফারসহ মোট ১৬টি পেশার মানুষ বর্তমানে পর্যটক না আসায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
স্থানীয় দোকানিরা জানিয়েছেন, পর্যটক না থাকায় বিক্রি প্রায় বন্ধ। অনেকেই দোকান খোলার আগ্রহও হারিয়েছেন। কুয়াকাটা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাঈনুল ইসলাম বলেন, দিনে দোকান খুলে বসে থাকি, কোনো ক্রেতা পাই না। পর্যটকই না থাকলে আমাদের ব্যবসা চলবে কীভাবে?” ফটোগ্রাফার সাইফুল মুন্সী বলেন, সৈকতে এখন কেউ আসে না ছবি তুলতে।
আগে প্রতিদিন অন্তত ৫-১০ জনের ছবি তুলতাম, এখন পুরো দিনেও একজন পর্যটক মেলে না। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ বলেন, পর্যটক না থাকায় হোটেলের অনেক কর্মচারী বেকার হয়ে গেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অনেক হোটেল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়ায় কেউ বুকিং দিচ্ছে না। ১৩ তারিখে তো একেবারেই ফাঁকা সৈকত দেখলাম। এমন অবস্থা আমরা আগে দেখিনি।
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব টোয়াক সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুশার বলেন, এখন পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে উপলক্ষে পর্যটকের উপস্থিতি এখন বেশি থাকার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটক কম আসছে। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোতালেব শরীফ বলেন, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা ধ্বংস হয়ে যাবে। কুয়াকাটা নির্ভরশীল একটি শহর, এখানে ৭০ শতাংশ মানুষ পর্যটন সংশ্লিষ্ট পেশায় জড়িত।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশের পর্যটন শিল্প বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। কুয়াকাটার মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকায় দ্রুত স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে পর্যটকদের আগমন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা।
