বরিশালের গৌরনদীতে চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সাথি আক্তার পরী নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পরপরই চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পালিয়েছেন। শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার বাটাজোড় এলাকার মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঘটনাটি ঘটেছে। পরী উজিরপুর উপজেলার ভরসাকাঠি গ্রামের ইমন আকনের স্ত্রী।
পরীর শ্বশুর নজরুল আকন জানান, শনিবার বেলা ১১টার দিকে পুত্রবধূর প্রসববেদনা শুরু হলে মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। প্রথমে ক্লিনিকের চিকিৎসক রাজিব কর্মকার নরমাল ডেলিভারির কথা বলে ৫ হাজার টাকার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। পরে সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তিনি (নজরুল) অন্যত্র সিজার করার কথা বললে বরিশাল থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক এনে অপারেশন করানোর আশ্বাস দেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
নজরুল আকন বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিজারের মাধ্যমে ছেলে বাচ্চার জন্ম দেয় পরী। সিজারের পরপরই সিজারকারী চিকিৎসক ক্লিনিক ত্যাগ করে চলে যান। পরে আধা ঘণ্টা পর পরীকে বেডে দেওয়া হলে তার শরীর সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শাসকষ্টের বিষয়টি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা জানায়- ক্লিনিকে কোনো অক্সিজেন নেই, বাইরে থেকে আনতে হবে। পরে একজন স্টাফ অক্সিজেন আনতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। তিনি আরও বলেন, পরীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হলে আমরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করি।
এ সময় ক্লিনিকের চিকিৎসক রাজিব কর্মকার এসে পরীক্ষা করে আমাদের কোনো কিছু না জানিয়ে ক্লিনিক থেকে থেকে বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ক্লিনিকের সব স্টাফরা পালিয়ে যায়। পরে পাশের একটি ক্লিনিক থেকে চিকিৎসক এনে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারি পরী মারা গেছে। কোন চিকিৎসক সিজার করেছে জানতে চাইলে তিনি সিজারকারী চিকিৎসকের নাম জানাতে পারেননি।
তবে ক্লিনিকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ল্যাব টেকনোলজিস্ট প্রান্ত হালদার জানিয়েছেন, ডা. সমিরন হালদার নামের এক চিকিৎসক পরীর সিজার অপারেশন করেছে। এ বিষয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মুঠোফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেওয়ায় তাদের কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি সিজারকারী ডা. সমিরন হালদারের মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়েও তাকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। গৌরনদী মডেল থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, খবর পেয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহতা জারাব সালেহীন বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরপরও ওই ক্লিনিকের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফলতি পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
