গত ১৩ নভেম্বর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা ঠেকাতে রাস্তার পাশে পেট্রোল বিক্রি সাময়িকভাবে সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। চলতি মাসের ১১ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত একটি রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তবে সরেজমিনে বরগুনা জেলার উপজেলাগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় এ প্রজ্ঞাপনের কোনো প্রভাবই নেই।
বরং প্রধান আঞ্চলিক সড়কের পাশে, জনবহুল বাজারে, বাসস্ট্যান্ড, ফেরিঘাট ও ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রায় ৪ শতাধিক দোকানে প্রতিদিনই খোলামেলাভাবে বোতলজাত করা পেট্রোল-অকটেন অবাধে বিক্রি চলছে। রাস্তার পাশের এসব দোকানে পানির বোতল, ভোজ্যতেলের বোতল, প্লাস্টিকের গ্যালন বা রাসায়নিকের পাত্রে দাহ্য জ্বালানি মজুত করে ফুটপাত বা সড়কের ধারে সাজিয়ে রাখা হয় ক্রেতা আকৃষ্ট করার জন্য। যা ফায়ার সার্ভিসের নিরাপত্তা নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
সদর উপজেলার বিপুল চন্দ্র, সাইফুল ইসলাম, আমতলী উপজেলার পারভেজ হোসেন, তালতলী উপজেলার শাহীন সাইরাজসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রতিদিন এসব দোকানের পাশ দিয়ে যাতায়াত করলেও প্রজ্ঞাপন অমান্যকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনিব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা আরও বলেন, সম্প্রতি জুলাই স্মৃতি স্তম্ভে অগ্নিসংযোগ, সদর, তালতলি, আমতলী, বেতাগী আঞ্চলিক সড়ক, বেতাগী ফেরিঘাট ও বাসে দাহ্য জ্বালানি ব্যবহার করে একাধিক অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসব ঘটনায় জেলায় আতঙ্ক সৃষ্টি হলেও পেট্রোল বিক্রি বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়নি বলে জানান তারা।
রাস্তার পাশে থাকা একাধিক পেট্রোল-অকটেন দোকানির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তারা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে অফ ক্যামেরায় প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে অবগত আছেন স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা পেট্রোল বিক্রি বন্ধ করে দিলে মোটরসাইকেল চালকরা কোথায় যাবে?’ তালতলী উপজেলার ব্রিজঘাট এলাকার হারুন ফরাজি নামের এক পেট্রোল দোকানি বলেন, ‘মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোক এসে পেট্রোল বিক্রি করতে নিষেধ করে আবার চলে যায়। তবে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন অমান্য করার বিষয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান তিনি।
এসময় দেখা যায় ১ লিটার, ২ লিটার, ৫ লিটারের শতাধিক প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল-অকটেন মজুত করে রেখেছেন এই ব্যবসায়ী। শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বরগুনার সচেতন নাগরিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, লকডাউন-শাটডাউন কর্মসূচি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়কে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে নাশকতা ঠেকাতে জেলাজুড়ে পেট্রোল বিক্রি বন্ধে প্রশাসনের তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এতে জেলার সাধারণ নাগরিকদের জননিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তাদের দাবি জেলায় ছড়িয়ে থাকা ৪ শতাধিক পেট্রোল দোকানের অর্ধেকই অনুমোদনহীন। সাম্প্রতিক অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের নাশকতা বা অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে দুর্বৃত্তরা।
এ বিষয়ে বরগুনার নবাগত জেলা প্রশাসক তাছলিমা আক্তার বলেন, ‘জুলাই স্মৃতি স্তম্ভের নিরাপত্তায় আনসার সদস্য নিয়োগের জন্য শনিবারই জেলা কমান্ডেন্টের বরাবর চিঠি পাঠানো হচ্ছে। প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নের বিষয়ে শনিবার সন্ধ্যা ও রোববারের সমন্বয় সভায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে। রাস্তার পাশে থাকা পেট্রোল, অকটেন বিক্রেতাদের নিরুৎসাহিত করতেও বলা হবে।’
