বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলায় ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে গৃহবধূকে অবুঝ দুই সন্তানের সামনে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে গৃহবধূ রুপা আক্তারককে তার স্বামী ওবায়দুল চৌধুরীর নির্দেশে কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে শাশুড়ি নিলুফা বেগম ও ঝা আমরিন বেগম।
আহতকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে উজিরপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্ততি চলছে। উল্লেখ্য- শিবপুর গ্রামের নুর ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মোঃ ওবায়দুল চৌধুরীর সাথে ২০১৯ সালে প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে পিরোজপুর জেলার কাউখালি উপজেলার শীর্ষা গ্রামের মোঃ ইদ্রিস আলীর মেয়ে মোসাঃ রুপা আক্তারের বিবাহ হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে আব্দুলাহ (৫), আনিশা ইসলাম তাবাচ্ছুম (১৯) মাসের দুই সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে রুপাকে তার স্বামী ওবায়দুল চৌধুরী বিভিন্ন সময় শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং প্রতারনা করে নগদ ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়।
স্বামীর মর্যাদা পেতে এলাকায় মোড়লদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে নির্যাতিতা অসহায় নারী। দুই অবুঝ সন্তানকে কোলে নিয়ে কান্না করে সাংবাদিকদের বলেন- আমি বিদেশ (জর্ডান) গিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় উপার্জন করি। আমি বিদেশ থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমার সাথে ওবায়দুল চৌধুরীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর আমাকে ফুসলিয়ে দেশে ফিরিয়ে এনে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। পরে আমি ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি।
এরপর লম্পট ওবায়দুল চৌধুরী আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হলে আমি কোন উপায়ন্তর না পেয়ে ধর্ষণ মামলা দায়ের করি। মামলার ঘানি থেকে বাঁচার জন্য আমাকে বিয়ে করে। আমাদের সাংসারিক জীবনে ১ ছেলে, ১ মেয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। আমার কষ্টার্জিত আয়ের ১২ লক্ষ টাকাসহ আমার স্বর্বস্ব লুটে নিয়ে আমাকে ও দুই সন্তানকে ফেলে সে ঢাকায় চলে যায়।
তিনি আরও বলেন- আমাকে আমার স্বামী ওবায়দুল চৌধুরী ও তার ভাই শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাইফুল চৌধুরীসহ পরিবারের সকলে মিলে আমাকে প্রায়ই মারধর করে এবং বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছে। তাদের হুমকির মুখে আমি নিরুপায় হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরেও কোন বিচার পাচ্ছি না। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার শালিশ মিমাংসাকে তোয়াক্কা করে না।
বর্তমানে আমি দুই সন্তানকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এখন আমাকে ভিক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। এরপরও ক্ষ্যান্ত হয়নি তারা। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্য আমার স্বামীর নির্দেশে শাশুড়ী ও জা মিলে কুপিয়েছে। অল্পের জন্যে প্রানে বেঁচে যাই। অভিযুক্ত ওবায়দুল চৌধুরী বলেন- আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহ করা হবে। উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুস সালাম জানান- অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ওই প্রতারক স্বামী ও হামলাকারীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন নির্যাতিতা।
