More

    ভোলার গ্যাস এলএনজি করে সরবরাহ

    অবশ্যই পরুন

    দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের চলমান সংকট কাটাতে সরকার দ্বীপ জেলা ভোলার গ্যাস এলএনজি (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আকারে শিল্প কারখানায় সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য এরই মধ্যে জ্বালানি বিভাগ থেকে ভোলার গ্যাসের মূল্য প্রতি ঘনমিটার ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি)।

    আগামী ২৩ ডিসেম্বর কমিশনের সভায় এ প্রস্তাব উত্থাপিত হবে। সভায় মূল্য নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে গণশুনানি করা হবে। বিইআরসির দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোলার গ্যাস এলএনজিতে রূপান্তর করে সরবরাহ করতে প্রাথমিকভাবে দেশি-বিদেশি ৯টি কোম্পানি আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত তালিকায় চারটি কোম্পানিকে রাখা হয়েছে।

    এগুলো হলো—গ্যাজপ্রম ইপি ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি), সিএনপিসি চাংগিং ড্রিলিং ইঞ্চিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক জিসিজি এলএনজি কোম্পানি। বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, ‘ভোলার গ্যাস এলএনজি করে সরবরাহ করার বিষয়টি একেবারেই নতুন। ফলে বিভিন্ন দিকবিবেচনা করতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের টেকনিক্যাল কমিটি কাজ করছে, তারা একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

    এ সপ্তাহে বিষয়টি কমিশনের সভায় উত্থাপন করা হবে। কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে এ বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।’ জানা গেছে, চলমান সংকটের কারণে শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের শুরুতে উদ্যোগ নেয়। এজন্য ভোলা থেকে দৈনিক ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এলএনজি আকারে আনার পরিকল্পনা করে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। পরিবহন খরচসহ এলএনজির দাম প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা। এর আগে বিগত সরকারের সময়ে বিতর্কিত একটি চুক্তির আওতায় দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সিএনজি (কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) আকারে আনছে দেশীয় কোম্পানি ইন্ট্রাকো।

    নির্বাহী আদেশে ওই গ্যাসের দাম ১৭ টাকা এবং পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৩০ দশমিক ৫০ টাকাসহ ৪৭ দশমিক ৫০ টাকা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ওই কোম্পানিটি ১৭ টাকা দিয়ে কিনে সাড়ে ৪৭ টাকায় বিক্রি করছে। ২০২৩ সালের ৮ মে প্রকাশিত ওই গেজেট সংশোধন করে এলএনজি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইন পরিবর্তনের কারণে যেহেতু নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম নির্ধারণের সুযোগ নেই, তাই বিইআরসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, দৈনিক ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এলএনজি আকারে নদীপথে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নদীপথে এনে ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকার শিল্প কারখানায় সরবরাহ করা হবে। যে কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তারা ভোলা থেকে কিনে নির্ধারিত দরে আগ্রহী শিল্প কারখানায় সরবরাহ করবে।

    জানা গেছে, এই গ্যাস নিতে তিতাস গ্যাসের অধিভুক্ত এলাকায় ৩২টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যাদের মোট গ্যাসের চাহিদা ১৫ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। তারা ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। কোম্পানিগুলো সর্বনিম্ন ১২ মাস থেকে সর্বোচ্চ ২৪ মাসের মধ্যে সরবরাহ শুরুর কথা বলেছে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে সরবরাহ ব্যাহত না হয়, সে জন্য উভয় প্রান্তে পাঁচ দিনের এলএনজি মজুত করার জন্য স্টোরেজ (মজুত) সুবিধা নির্মাণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

    একই সঙ্গে গ্যাস ক্ষেত্রের নিরাপত্তার জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে দৈনিক ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। দেশে চলছে ভয়াবহ গ্যাস সংকট, এলএনজি আমদানি করেও ঘাটতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে, তীব্র সংকটের এমন সময়ে দ্বীপ জেলা ভোলায় বিপুল উদ্বৃত্ত গ্যাস অব্যবহৃত পড়ে থাকছে। দৈনিক মাত্র ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হয় সেখানে, যা ভোলাতে স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভোলার এই উদ্বৃত্ত গ্যাস আনতে পাইপলাইন স্থাপনের বিষয়ে কয়েক দশক ধরেই আলোচনা চলে আসছে।

    ভোলা-বরিশাল-খুলনা পাইপলাইনের পরিকল্পনা থাকলেও রুট পরিবর্তন করে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা করা হয়েছে। ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে, বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলমান। বলা যায়, অর্থায়ন ইস্যু নিয়েই বিষয়টি ঝুলে রয়েছে এতদিন। ৭ হাজার কোটি টাকার জন্য যখন পাইপলাইন আটকা, তখন এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে ৬৪৯ কোটি টাকা (গত আগস্টের দরপত্র), যা দেশের মাত্র দেশে এক দিনের সরবরাহের (৩০০০ মিলিয়ন) সমান। দ্বীপজেলা ভোলাতে এখন পর্যন্ত তিনটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।

    ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে, যেগুলোর দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১৯০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা না থাকায় মাত্র ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট (১৪ নভেম্বর ২০২৫) উত্তোলন করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ১৫টি কূপ খননের লক্ষ্যে কাজ করছে পেট্রোবাংলা। পাইপলাইন বাস্তবায়ন ও প্রস্তাবিত কূপগুলো খনন শেষ করলে সেখান থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছে বাপেক্স।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    ঝালকাঠিতে খোলা আকাশের নিচে ৪৫০ বস্তা আলু, মালিকের খোঁজ মেলেনি

    ঝালকাঠির নলছিটিতে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪৫০ বস্তা আলু জব্দ করেছে পুলিশ। তবে ওই আলুর মালিক পাওয়া যায়নি। রোববার (২১ ডিসেম্বর)...