ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যে এক অভাবনীয় ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশি তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া। যাকে খুন করা হয়েছে বলে মামলা হয়েছে, আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে ও স্বীকারোক্তি নেয়াসহ সবই সম্পন্ন হয়েছে, সেই ব্যক্তি নিজেই জীবিত অবস্থায় থানায় হাজির হয়ে পুরো মামলাটিকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন।
মূলত যাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করে হত্যা মামলা করা হয়েছিল, সেই ব্যক্তি নিজেই জীবিত অবস্থায় থানায় হাজির হয়েছেন। এতে আলোচিত একটি খুনের মামলা পুরোপুরিই উল্টে গেছে। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, গত ২২ অক্টোবর পূর্ণানগর–তুরিতোংরি বনাঞ্চল থেকে একটি অর্ধদগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহটি জশপুর জেলার সিতোঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সীমিত খাখা (৩০) বলে শনাক্ত করা হয়। এরপর তার হত্যার অভিযোগে রামজিত রাম, বীরেন্দ্র রাম এবং এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পলাতক থাকা শীতল মিনজ ও জিতু রামকেও অভিযুক্ত করা হয়।
সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিহতের বাবা–মা ও ভাই মরদেহ শনাক্ত করেন। অভিযুক্তরা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারোক্তিও দেন বলে দাবি করা হয়। ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল পুনর্গঠন করে। সব মিলিয়ে কাগজে-কলমে মামলাটি ছিল শক্তপোক্ত। কিন্তু গত শনিবার গভীর রাতে সৃষ্টি হয় চাঞ্চল্য। সেদিন সেই ‘নিহত’ সীমিত খাখাই সশরীরে সিতোঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের সরপঞ্চ কল্পনা খালখো (টোপ্পো)-এর সঙ্গে সিটি কোতোয়ালি থানায় হাজির হন।
পুলিশকে সীমিত জানান, তিনি কাজের সন্ধানে ঝাড়খণ্ডে গিয়েছিলেন। রাঁচিতে সঙ্গীদের থেকে আলাদা হয়ে গিরিডিহ জেলার সরাই পালি গ্রামে মাঠের কাজে যুক্ত ছিলেন। তার কাছে মোবাইল ফোন না থাকায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে জশপুরে ফিরে জানতে পারেন, তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে এবং তার সঙ্গীরা তার ‘হত্যার’ অভিযোগে জেলে আছেন। সীমিত খাখা বলেন, ‘আমরা পাঁচজন গিরিডিহে কাজে গিয়েছিলাম। আমি সেখানে ক্ষেতে কাজ করছিলাম। ফোন না থাকায় বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারিনি। ফিরে এসে দেখি আমাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। কেন আমাকে মৃত ঘোষণা করা হলো?
আগে ডিএনএ পরীক্ষা করা উচিত ছিল। আমি তো জীবিত, তাহলে আমাকে মৃত ঘোষণা কেন? আমার বন্ধুরা জেলে— তাদের ছেড়ে দিন। আমার সন্তানরা খুব ছোট, তিন মাস ধরে ঠিকমতো খেতে পারেনি। জীবিত মানুষকে মৃত ঘোষণা— এ কেমন আইন?’ এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হতেই সিতোঙ্গা গ্রামে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কারণ এই মামলার কারণে গ্রামবাসী দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক চাপ ও আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। সরপঞ্চ কল্পনা টোপ্পো বলেন, ‘একটি আংশিক পোড়া মরদেহকে সীমিত খাখা হিসেবে শনাক্ত করে আমাদের গ্রামের চারজনকে আটক করা হয়।
তারা নির্দোষ। সীমিত ফিরে আসার খবর পেয়ে গ্রামের এক অটোরিকশাচালক আমাদের জানায়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে থানায় নিয়ে আসি’। এদিকে পুলিশ দাবি করছে, আইন অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। তবে তারা স্বীকার করছে, সীমিত জীবিত থাকায় মামলাটি এখন অনিশ্চিত অবস্থায় পড়ে গেছে। এসডিওপি চন্দ্রশেখর পারমা বলেন, ‘ঘটনার পর সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং তারা স্বীকারোক্তি দেয়। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ফৌজদারি বিধির ১৮৩ ধারায় জবানবন্দি নেয়া হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা মরদেহ শনাক্ত করেন।
এসব প্রক্রিয়ায় পুলিশ উপস্থিত ছিল না। সব তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এখন সীমিত খাখা সামনে আসায় অভিযুক্তদের অস্থায়ী মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং মামলাটি নতুন করে তদন্ত করা হচ্ছে।’ এদিকে সীমিত জীবিত থাকায় সেই অর্ধদগ্ধ মরদেহটি আসলে কার— তা এখনও রহস্য। প্রকৃত নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করতে এবং শনাক্তকরণ থেকে স্বীকারোক্তি পর্যন্ত পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে একজন গেজেটেড কর্মকর্তার নেতৃত্বে বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।
