কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
’৬৯ এর গণ অভ্যূত্থানে দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম শহীদ মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ, ২৮ জানুয়ারি। ১৯৬৯ সালের এই দিনে বরিশাল
শহরে পাকিস্তানি স্বৈর-শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে
পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। এ বছর এ দিবসে কিছু কর্মসূচি হাতে
নিয়েছে সদ্য গঠিত ‘ শহীদ আলাউদ্দিন স্মৃতি সংসদ কলাপাড়া’।
কর্মসূচির মধ্যে সকাল ১০টায় কালোব্যাজ ধারন। শোকর্যালী সহকারে
শহীদ আলাউদ্দিন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি, বেলা ১১টায় মুক্তিযোদ্ধা
সংসদ কমপ্লেক্স মিলনায়তনে স্মরণ সভা। শহীদ আলাউদ্দিন স্মৃতি সংসদের
সাধারণ সম্পাদক কমরেড নাসির তালুকদার জানান, নতুন প্রজন্মকে
এই শহীদ সন্তানের আদর্শকে পৌছে দিতে হবে। শহীদ আলাউদ্দিন
স্মৃতি সংসদের সভাপতি প্রভাষক রফিকুল ইসলাম মিয়া জানান, শহীদ
আলাউদ্দিনের জীবনী ধারন করতে আরও ব্যাপক পরিসরে উদ্যোগ নেয়ার
পরিকল্পনা রয়েছে। পারিবারিভাবে আলাউদ্দিনের বাড়ি কলাপাড়ার
হাজিপুরে এই দিনে দোয়া মোনাজাত আয়োজন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ওই সময়ে আলাউদ্দিন খান ছিল বরিশাল আসমত আলী খান
ইনস্টিটিউশনের (একে স্কুলের) দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। ১৯৬৯
সালে পাকিস্তানি স্বৈর শাসক আইউব বিরোধী আন্দোলনে ২৮
জানুয়ারি বরিশাল শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা
ভঙ্গ করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আহুত বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু হয়। বিক্ষোভ
চলাকালে বরিশালের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে পুলিশের সঙ্গে খন্ড খন্ড
সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত হয় বেশ কিছু ছাত্র-জনতা। এ সময়
মোহাম্মদ আলাউদ্দিন খানও শহরের গুলবাগ মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে
মাটিতে ঢলে পড়েন। দ্রুত তাকে বরিশাল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা
হলে ওই দিন রাত ১১টার দিকে সে মারা যায়।
পরের দিন বরিশাল থেকে লাশ কলাপাড়ার উদ্দেশ্যে আনার পথে পটুয়াখালী
লঞ্চঘাটের কাছে শিশুপার্কে রাখা হয়েছিল। ’৮১ সালে ছাত্রজনতার দাবির
মুখে পটুয়াখালী শিশু পার্কের নাম করন করা হয় শহীদ মোহাম্মদ
আলাউদ্দিন শিশু পার্ক। আলাউদ্দিনকে তার গ্রামের বাড়ি পূর্ব
হাজিপুর গ্রামের পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়। এর ১৫ দিন পরে
বরিশালের ছাত্র নেতারা তার কবর বাঁধাই করে দিয়ে যায়। পরবর্তীতে
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান শহীদ আলাউদ্দিনের কবরটি
টাইলস করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। ’৭০ সালের নির্বাচনের পূর্বে
স্থানীয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ চাঁদা তুলে
আলাউদ্দিনের স্মৃতি রক্ষার জন্য কলাপাড়ায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ
করেন। ’৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা ওই স্মৃতি সৌধ ভেঙ্গে ফেলে।
’৮৩ সালে তৎকালীন ইউএনও মজিবুর রহমান শহীদ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন
খান স্মৃতি সৌধটি উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে পুন:নির্মান করেন।
এর পর থেকে আলাউদ্দিন স্মৃতিসৌধ কলাপাড়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
হিসেবে ব্যাবহার হয়ে আসছিল। ছয় বছর আগে কলাপাড়ায় কেন্দ্রীয়
শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলে শহীদ আলাউদ্দিন স্মৃতি সৌধটি
অযত্নে পড়ে থাকছে। উল্লেখ্য শহীদ আলাউদ্দিন খান ১৯৫২ সালের ১
জানুয়ারি কলাপাড়ার পূর্ব হাজিপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।
অমল মুখার্জী
কলাপাড়া প্রতিনিধি