বরিশালের মুলাদী উপজেলায় মে মাসের বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে বলে অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। কারও কারও বেলায় ৪ থেকে ৮ গুণ বাড়তি টাকাও বিল করা হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা।
তাদের অভিযোগ, মিটার না দেখে রিডিং বসিয়ে বিদ্যুৎ বিল তৈরি করায় এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মুলাদী আঞ্চলিক কার্যালয়ে আওতায় প্রায় ৭৬ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। অধিকাংশ গ্রাহকদের মে মাসের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল করা হয়েছে। দরিদ্র ও হতদরিদ্র প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক বাড়তি বিল পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
মুলাদী সদর ইউনিয়নের দড়িচর বজায়শুলি গ্রামের বাসিন্দা আজাহার ব্যাপারী জানান, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ২৫০ টাকা বিদ্যুতের বিল দিয়ে আসছিলেন। হঠাৎ মে মাসে দেখেন, তার বিদ্যুৎ বিল ১ হাজার ৮৮০টাকা। এত বিল দেখে তার চোখ কপালে। সমস্যার সমাধানে বিদ্যুৎ কার্যালয়ে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
একই গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ সিকদার জানান, গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তার বিদ্যুৎ বিল ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। সেখানে মে মাসের বিদ্যুৎ বিল দেয়া হয়েছে ১ হাজার ২১৮ টাকা।
মুলাদী সদর ইউনিয়নের দড়িচর গ্রামের মুজিবুর রহমান সরদার জানান, এপ্রিল মাসে তিনি ২৪৬ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন। কিন্তু মে মাসে প্রায় ৫ গুন বাড়িয়ে বিল করা হয়েছে ১ হাজার ৯৩ টাকা।
আনোয়ার সরদার নামে আরেক গ্রাহক জানান, এক বছর ধরে তিনি সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা বিল দিতেন। মে মাসে তার বিল করা হয়েছে ১ হাজার ৬৫০টাকা।
উপজেলার আরও কয়েকটি ইউনিয়নের ১০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের এলাকার বেশিরভাগ গ্রাহকদের মে মাসে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল দেয়া হয়েছে।
তারা অভিযোগ করেন, নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুতের মিটার রিডাররা প্রতি মাসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখে বিল করবেন। তবে অধিকাংশ মিটার রিডাররা তা করেন না। তারা মিটার না দেখে অনুমান ভিত্তিক রিডিং বসিয়ে বিদ্যুৎ বিল তৈরি করেন। এ কারণে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মুলাদী আঞ্চলিক কার্যালয়ের এক কর্মচারী বলেন, ‘মিটার রিডাররা গ্রামে বা দূরের এলাকায় ঠিকমতো যান না। ফলে পেছনের মাসগুলোতে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল কিছুটা কম এসেছে। কিন্তু অর্থবছরের শেষ মাসে এসে প্রকৃত মিটার রিডিং দেখে বিল করায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে। মুলাদী আঞ্চলিক কার্যালয়ে আওতায় প্রায় ৭৬ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এ কারণে অধিকাংশ গ্রাহকদের মে মাসের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল এসেছে।’
বরিশাল পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মুলাদী আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আনন্দ কুমার বলেন, ‘ব্যবহার বেশি হলে বিল বেশি আসবে। বিদ্যুতের দাম তো বাড়েনি, তাই কেন বেশি বিল এসেছে, তা তদন্ত না করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, গরম বেশি হওয়ার কারণে গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ খরচ বেশি করেছেন। এ কারণে হয়তো বিল বেশি আসছে। এরপরও অভিযোগ থাকলে তা জানালে সমাধান করা হবে।’
ডিজিএম আনন্দ কুমার বলেন, ‘মিটার রিডিং মাসেরটা মাসে করতে বলা হয়েছে। এক মাসেরটা পরের মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে মিটার রিডারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’