আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ :ভোরের আলোর আলোক রশ্মি মসুর, ভুট্টা, তিল তিষির পাতায় জমে থাকা শিশির
কণার উপর পরে যেমন অপরূপ শোভার সৃষ্টি করে তেমনি বিকেলের গোধূলী লগ্নে
সরিষা ক্ষেত যেন প্রকৃতিকে করে তোলে অপরূপ। হলুদে হলুদে সেজেছে বরিশালের
আগৈলঝাড়ার বিস্তৃর্ন ফসলের মাঠ।
দিগন্ত জোড়া মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে কৃষকের স্বপ্ন রঙিন হয়েছে। চারদিকে
সরিষার ক্ষেত যেন বাতাসে দুলছে। আর এ কারণে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক।
যেমনি সরিষার বাম্পার ফলন তেমনি ফুলের মধু গ্রামীণ অর্থনীতিতে সম্ভাবনার
হাতছানি দিচ্ছে। বিশেষ করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিস্তৃর্ন মাঠজুড়ে
এখন সরিষা ক্ষেত।
যতদূর চোখ যায় হলুদ গাদা ফুলের ন্যায় সুসাজে সজ্জিত ফসলের মাঠ। কৃষক
অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাটি চষে ফসল ফলায়। কৃষক চাষ শেষে
আশায় বুক বেঁধে চেয়ে থাকে মাঠের পানে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় চলতি মৌসুমে বিনা
চার, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭, বারি সরিষা-১৮ জাতের সরিষা আবাদ
হয়েছে। উপজেলায় ২০টি প্রদর্শনী এবং জেলা কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়
৫টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ করার পাশাপাশি উপজেলায় ২৫০ জন
চাষিদের সরিষার বীজসহ ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সার দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে শুধুই যেন হলুদের সমারোহ। সরিষার হলুদ
ফুলে ছেয়ে গেছে উপজেলার দিগন্ত জোড়া মাঠ। খেতে গুন গুন করছে মৌমাছি।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন এলাকার চাষিরা।
রাজিহার ইউনিয়নের বড়বাশাইল গ্রামের কৃষক হাবুল মৃধা বলেন, স্বল্প সময়ে স্বল্প
খরচে অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে অধিক মুনাফা থাকায় জমিতে আগাম
জাতের সরিষার আবাদ করেছি।
তিনি বলেন, তাই বিকল্প ফসল হিসেবে অন্য ফসলের
পাশাপাশি কৃষি অফিসের সহয়তায় তিনি সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
একই এলাকার কৃষক ফকরুল ইসলাম বলেন, সরিষা চাষে সার কম প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ, কীটনাশক ও নিড়ানি তেমন লাগে না। একেবারই খরচ কম ও অল্প সময়ে এ ফসল
ঘরে তোলা যায়। বর্তমান বাজারে দামও ভাল।
কৃষক মিনাল সমদ্দার, গোপাল দাস বলেন, দেশে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েই চলছে। তাই
তেলের চাহিদা মেটাতে আমরা সরিষার চাষ করছি।
আহুতিবাটরা ও কান্দিরপাড় গ্রামের কৃষক সবুজ সরদার, হাবুল ফকির জানান,
অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে খরচ অনেক কম। ফলে লাভ বেশি হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর বসু জানান, সরিষার রোগ বালাই
দমনে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছরে আবহাওয়া
অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে সব ধরনের সহয়তা দেওয়া হয় কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, এবার উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে
সরিষা আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার
চাষ করা হয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চাষিদের সার, বীজ ও কীটনাশকসহ
আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার
আবাদ থেকে কৃষকরা বাড়তি মুনাফা আয় করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
বরিশাল নিউজ/এসএলটি