বরশির সুতাকে জীবিকার অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছেন বরগুনা উপজেলার তালতলীর নিওপাড়ার ৪ বোন।জীবন যুদ্ধে হার না মেনে বরং জীবনকে তাদের মত করে গড়ে তুলেছেন হাচেন মোল্লার ৪ মেয়ে। তাই তাদের নরম হাতের বরশির সুতায় জেনো তাদের স্বপ্ন গাঁথা। ছোট্র বেলা থেকে দেখে এসেছেন পরিবার কি ভাবে কষ্টের যাতাকলে পিসে তাদের বাবা আজ ভূগছে শ্বাসকষ্টে। পরিবার প্রধান আয় রোজগার করতে পারতো না, ঘরে খাবার থাকত না। ক্ষুধা নিবারণের জন্য তারে ছোট বেলা থেকেই খালে বিলে মাছ ধরতো।
পরিবারে চার বোন জীবনের আশা ভরসা হিসেবে বেছে নিয়েছি কর্মযুদ্ধ তাই কখন হাত দিয়ে, কখনো বরশি দিয়ে, আবার কখনো জাল দিয়ে মাছ ধরছি। অনেক কষ্টে করে জীবন কাটছে!
কথাগুলো বলেছিলেন জরিনা বেগম। তিনি বরগুনার তালতলী উপজেলার নিওপাড়া এলাকার হাচেন মোল্লার মেয়ে।
ছোটবেলা থেকেই বরশি দিয়ে মাছ ধরে চলছে তার জীবন সংগ্রাম। তারা পাঁচ বোন ও এক ভাই। তাদের মধ্যে চার বোন জরিনা, ফাতেমা, হালিমা, রাহিমা আন্ধারমানিক নদীতে কখনো বরশি, কখনো জাল টেনে মাছ শিকার করেন। এভাবেই চলছে তাদের সংসার।
নিওপাড়া এলাকার গেলে দেখা যায়, মাছ পাওয়ার আশায় প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে স্লুইসগেট সংলগ্ন নদীতে সারিবদ্ধ নৌকায় বসে বড়শির ছিপ ফেলেন চার বোন। কারো বড়শিতে চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, বোয়াল আবার কারো ধরা পড়ছে কোড়াল, রুই, পাঙাশসহ নানা প্রজাতির মাছ। এসব মাছ বাজারে নিলে তিনশত টাকা থেকে চাঁরশত টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে কখনো কখনো খালি হাতেও ফিরতে হয়।
কথা হলে চার বোন জানান, নদীতে মাছ থাকলে তাদের সংসারের সব সদস্যর পেটে ভাত জোটে। আর মাছ না থাকলে পেটে ভাতও জোটে না। তবু সংসার চালাতে প্রায় ৪০ বছর যাবত বড়শির ছিপ ধরে আছেন তারা।
বিয়ের পরও একই রকম রয়ে গেছে চার বোনের জীবন। সরকারি আবাসন প্রকল্পে বসবাসের সুযোগ ছাড়া জীবনে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি তাদের। এর কারণ হিসেবে জরিনা বেগম বলেন, আমাদের বাবার তেমন ভিটে মাটি, অর্থ-সম্পদ ছিল না। বিয়ে দিয়েছে তাও গরীব বাড়িতে, বয়স্ক রোগাক্রান্ত স্বামী কাজ করতে পারে না।
আরেক বোন রাহিমা বেগম বলেন, ছোট সময় থেকেই বরশি দিয়ে মাছ ধরি। প্রথম দিকে রাতে রাতে মাছ ধরতাম। পরে পেটের টানে দিনেও মাছ ধরা শুরু করছি। মানুষে লজ্জা দিত মহিলা মাছ ধরে। কিন্তু আমাদের তো উপায় নাই। মাছ ধরতে পারলে খেতে পারি, আর মাছ না পেলে না খেয়েই থাকতে হয়। এভাবেই চলতেছে আমাদের জীবন।
আক্ষেপ করে তিনি আরো বলেন, সেই ছোটবেলা থেকে নদীতে মাছ ধরি। কিন্তু যারা কোনদিনও মাছ ধরে নাই তারাও জেলে কার্ডের চাল পায়। রাতদিন মাছ ধরেও আমরা চাল পাই না।
চার বোনকে নিয়ে তালতলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার তুমপার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, নারী থাকায় এদেরকে জেলে তালিকাভুক্ত করতে পারছি না৷ তবে এরা গরু, ছাগল ও অন্যান্য প্রণোদনার মাধ্যমে যেন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে এবং এর মাধ্যমে তাদের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর মধ্যে আনার পরিকল্পনা নিয়েছি।