আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় মায়ের চিকিৎসার জন্য মেয়ে বিদেশ থেকে টাকা পাঠালেও ওই টাকা ব্যাংকের গাফিলতির কারনে ৪ বছরেও টাকা উত্তোলন করতে পারেনি গ্রাহক। টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মায়ের মৃত্যু হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই পরিবারসহ এলাকাবাসী।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাকাল গ্রামের মৃত গনি সরদারের মেয়ে হেনা আক্তার পবিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে গৃহকমীর্ হিসেবে কাজ করে আসছে।
দেশে মা রহিমা বেগম অসুস্থ হয়ে পরলে তার চিকিৎসার জন্য হেনা আক্তার সৌদি আরব থেকে মায়ের চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের ২রা ডিসেম্বর সৌদি আরব আলরাজী মানি এক্সচেঞ্জ এর প্রেরিত রেমিটেন্স নং ২৪৮৮৩৬১২ এর মাধ্যমে ৪৪ হাজার ৪শত ৬৪ টাকা তার বোন রিনা বেগমের জনতা ব্যাংক আগৈলঝাড়া শাখার চলতি হিসাব নং—১০২১০০৩২১০ পাঠায়।
গ্রাহক রিনা বেগম আগৈলঝাড়া জনতা ব্যাংকের শাখায় টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার বিশ্বাস তার টাকা আসেনি বলে একাধিকবার তাকে ফেরত দেন। টাকা উত্তোলনের জন্য দীর্ঘদিন ব্যাংকের দুয়ারে ধণার্ দিয়েও টাকা না পাওয়ায় তার মা রহিমা বেগম টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান।
টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে মা রহিমা বেগম মারা যাওয়ায় মেয়ে হেনা ও রিনা বেগমসহ এলাকার লোকজন জনতা ব্যাংকের এহেন কর্মকান্ডের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় রিনা বেগম টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য আগৈলঝাড়া জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের বরাবর লিখিত আবেদনও করেন।
এরপর বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো তথ্য প্রমান নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে জানতে পারে বিদেশ থেকে হেনা আক্তারের পাঠানো টাকা ৪ বছরেও বোন রিনা বেগমের হিসাব নং জমা হয়নি।
এব্যাপারে প্রবাসী হেনা আক্তার বলেন, আমি সৌদি আরব থেকে কঠোর পরিশ্রম করে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে বোনের কাছে টাকা পাঠিয়ে ছিলাম।
দীর্ঘদিনেও টাকা না পাওয়ায় আমার মা বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য জনতা ব্যাংকই দায়ী। তৎকালীন আগৈলঝাড়া জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই শাখায় থাকাকালীন সময় রিনা বেগম নামে কোন গ্রাহক আমার কাছে আসেনি।
এবিষয়ে আগৈলঝাড়া জনতা ব্যাংকের বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক মো. শহিদুল হক জানান, আমি যোগদানের পরে ঘটনাটি জানতে পেরে ২০২২ সালের ১৩জুলাই জনতা ব্যাংকের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে অবহিত করি।
প্রধান কার্যালয় থেকে আমাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে সৌদিআরব থেকে হেনা আক্তারের প্রেরিত টাকা চাদপুর জেলার জনতা ব্যাংকের বালিথুবা বাজার শাখায় রিনা বেগম নামে এক গ্রাহকের হিসাব নং জমা হলে ওই গ্রাহক টাকা তুলে নিয়ে গেছে।
জনতা ব্যাংকের (বরিশাল) জিএম মোহাম্মদ আলী বলেন, এঘটনা আমার জানা ছিলনা। এখন জানতে পেরেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের (বৈদেশিক শাখা)’র ডিজিএম মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমি নতুন এসেছি, পূর্বে জানা ছিল না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। এখন গ্রাহক যাতে টাকা ফেরৎ পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে।