More

    ঝালকাঠিতে এখনও ঘরে উঠতে পারেনি এক হাজার পরিবার

    অবশ্যই পরুন

    ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় এক হাজার পরিবার এখনও নিজ ঘরে উঠতে পারেনি। ঘূর্ণিঝড়ের সাথে জলোচ্ছ্বাসের কারণে ঝালকাঠি জেলার ৫৮৯টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছ। ৪ হাজার ৬০০ ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানবতার জীবনযাপন করছে ঘর হারিয়ে এসব মানুষ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিষখালী নদী তীরবর্তী সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চরভাটারাকান্দা গ্রামে বেড়িবাঁধ না থাকায় গত ২৬ মে দুপুরেই জোয়ারের পানি আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করতে শুরু করে। পানির চাপ বেশি দেখে ওই এলাকার বাসিন্দারা তাদের জরুরি মূল্যবান সম্পদ ও গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠে। ঝড়ের কবলে ঘরের উপরে গাছ পড়ে মাথা গোঁজার শেষ ঠাইটুকুও বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

    পানি বৃদ্ধিতে কাঁচা ঘরের ফ্লোর এখনও স্যাঁতস্যাঁতে রয়েছে। ঘরে উঠতে গেলেই কর্দমাক্ত হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। তাই এখনও অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রেই রাত্রি যাপন করছেন। শুধু ওই গ্রামের মানুষই নন, জেলার প্রতিটা এলাকায় এমন অবস্থা নিম্ন আয়ের মানুষের। তারা বর্তমানে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হেমায়েত উদ্দিন জানান, আমাদের ৫ জনের সংসার।

    একাই উপার্জন করে সংসার চালাই। কোনমতে কাঠের ঘর তুলে টিনের ছাউনি দিয়ে বসবাস করি। দিনমজুরি ও অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে যা উপার্জন করতাম তা দিয়ে সমান সমান সংসার চালাতে পারতাম। ঝড়ে গাছ পড়ে আমার ঘরটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এখন আর সেই ঘরে থাকতে পারছি না। পাশের একটি ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। ঘরটি সংস্কার করারও কোন সামর্থ্য নেই আমার।

    অন্যের ঘরে ইটের অস্থায়ী চুলা তৈরি করে রান্না করে তা খেয়ে কোনমতে জীবনযাপন করছি। মামুন হাওলাদার জানান, আমাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বলতেই শুধু বাপের ভিটা। রিমালের প্রভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের টিনকাঠের ঘরেও পানি ঢুকেছে। ঘরের মধ্যেও হাঁটু সমান পানি হওয়ায় চৌকিতে মালামাল উঠিয়ে প্রতিবেশীর ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। এখন পর্যন্ত ওই ঘরেই বসবাস করছি।

    যতক্ষণে ঘরের ফ্লোর না শুকাবে ততক্ষণে ঘরে উঠতে পারবো না। রোহিঙ্গার মতোই বসবাস করতে হচ্ছে এখন। বিধবা লাইজু বেগম জানান, স্বামী মারা গেছেন ২ বছর আগে। দুটি ছেলে সন্তান নিয়ে বসবাস করতাম। দিনমজুর স্বামীর ভিটা ছাড়া আমাদের আর কোন জমি নাই। স্বামী মারা যাবার পরে মানসের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালাতাম।

    ঝড়ে আমাদের কোপা খুঁটির ঘরের উপরে প্রতিবেশীর গাছ পড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। ঝড়ের সময় বাড়ির একটি ঘরে আশ্রয় নিলেও পরে আর সে ঘরে আমাদের রাখেনি। আধা কিলোমিটার দূরে স্বামীর দিন মজুরী সহকর্মী একজনের ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। একবান টিন কিনেও যে নিজের ঘরে আশ্রয় নিবো সেই সাধ্যও নেই আমার। এখন ওই ঘরেই পরবাসের মতোই থাকছি।

    তারা দয়া করে যা দেয় তাই খেয়ে দিনাতিপাত করছি। হনুফা বেগম জানান, আমার বাবা মারা গেছেন অনেক বছর আগে। আমিও স্বামী পরিত্যক্তা। মায়ের সাথেই ঘরে থাকতাম। বন্যা ঘরের উপরে গাছ পড়ে তা শেষ হয়ে গেছে। মাটির ঘরে পানি ওঠায় তাও ফুঁসে গেছে। এখন ঘরে থাকতে পারছি না।

    পাশের বাড়ির একজনের গোয়ালঘরে আশ্রয় নিয়েছি। রান্না করে খাবার মতোও আমাদের কোন উপায় নেই। বৃদ্ধ মাকে নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। কেউ যদি সাহায্য করতো, তাহলে হয়তো মার মুখে একটু খাবার তুলে দিতে পারতাম। এখন যেভাবে বেঁচে আছি, তাতে মানুষ বাঁচতে পারে না।

    জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম জানান, আমরা বিশ্বস্ত লোক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছি। সরকারি সহায়তার বরাদ্দ পেলে যথাযথভাবেই তা বণ্টন করা হবে। বন্যার সময় আশ্রিতদের শুকনা খাবার সরবরাহ করেছি। কারো সমস্যা হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা তা জরুরি ফান্ডের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবো।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    শনিবার ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

    অনলাইন ডেস্ক: বিতরণ লাইন মেরামত ও ট্রান্সফরমারের জরুরি সংস্কারকাজের জন্য সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ...