পবিত্র ঈদ উল আযহার বাকি আর মাত্র এক দিন। প্রতিবারের মত এবারও বরিশালে বসছে স্থায়ী এবং অস্থায়ী পশুর হাট। শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেল থেকেই জমে উঠছে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। ইজারাদাররা বলছে শনিবার হাট আরও জমবে এবং বেঁচা বিক্রিও বাড়বে। এবারে পশুর দাম গতবারের থেকে বেশি বলছে ক্রেতারা আর খামারিরা বলছে গো- খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পশুপালনের খরচ বেড়েছে। যে কারনে লোকসান রোধে খামারিরা কোরবানির হাটে পশুর দামও হাঁকাচ্ছেন বেশি।
বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং জেলা প্রশাসন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, জেলায় এবারে মোট ৮২টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলায় স্থায়ী ২৫টি, অস্থায়ী ৫৩টি এবং বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় স্থায়ী ১টি ও অস্থায়ী ৩টি হাট বসেছে। এছাড়াও খামারিদের কাছেও প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৭টি পশু।
কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর থেকে গরু আসছে এসব হাটে। বরিশাল নগরীতে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে ৪টি হাট রয়েছে এর মধ্যে নগরীর বাঘিয়া ঝাউতলা হাটে গরু উঠেছে। এই হাটেও কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা থেকে বেশি গরু এসেছে। একই অবস্থা বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলার ৭৮টি কোরবানির পশুর হাটের অধিকাংশের। এসব হাটের অধিকাংশে বুধবার পর্যন্ত প্রায় ক্রেতা শূন্য ছিল। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা গরু ও ছাগল নিয়ে এসব হাটে হাজির হলেও চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতা নেই। যারা আসছেন তারাও ছোট বা মাঝারি আকারের গরু খুঁজছেন। গত বছর যে সাইজের গরুর দাম নেওয়া হয়েছিল সর্বোচ্চ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এবার সেই গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে পৌনে ২ লাখ টাকার বেশি। সাধারণ সাইজের যে গরু গত বছরও ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায় মিলেছে, এবার তার দাম ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকা। আর তাই হাটে অসংখ্য গরু আসার পরও বেঁচাকেনা নেই।
এদিকে পণ্যের দাম ও গরু পালনে খরচ বেড়েছে বলে জানায় ব্যবসায়ী জুয়েল হোসেন। তিনি বলেন, গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। গরু লালন-পালনে খরচ বেশি হচ্ছে। পরিবহন ব্যায় অস্বাভাবিক বেড়েছে। ন্যায্য দাম না পেলে আমাদের লোকসান হবে। তবে গরুর দাম একটু বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় বিক্রি কম। আশা করছি শনিবার থেকে ক্রেতা বাড়বে এবং বেঁচা-বিক্রি ভালো হবে।
নানা অজুহাতে প্রতিবছর কোরবানির পশুর দাম বাড়ায় বলে অভিযোগ করেন চরমোনাইতে গরু কিনতে আশা মো. মারুফ হাসান। তিনি জানান, হাটে অনেক গরু, তবে দাম অনেক বেশি। পশু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছে তাদের নাকি পশু পালনে খরচ বেড়েছে তাই গরুর দাম গতবারের থেকে এবছর আরো বেশি। তিনটি হাট ঘুরে দেখলাম সাধ্যের মধ্যে গরু খুঁজে পাইনি। কেবল হাট তো বসতে শুরু করছে কাল পরশু পেয়ে যাবো আশা করছি।
বরিশাল মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আলী আশরাফ ভূঞা জানান, ইজারাদারদের নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, স্বেচ্ছাসেবক ও নৈশ প্রহরী রাখাসহ পশুর হাটে অবশ্যই সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে সরকার বা ইজারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত খাজনার বেশি আদায় করা যাবে না। সেই সঙ্গে পশুর হাটে যেন কোনো প্রকার দালাল না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। আর্থিক লেনদেনের সময় প্রয়োজনে পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারেন যে কেউ। পশুর হাটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। এছাড়া নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা পশু ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।