বিলাসবহুল দামি গাড়ি, বহুতল ভবনের একাধিক বাড়িসহ নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বরিশাল সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল। তিনি তার স্ত্রীর নামেও কিনেছেন একাধিক জমি, করেছেন মাছের ঘেরসহ অ্যাগ্রো ফার্ম। ছেলের নামে রয়েছে প্রচুর সম্পদ। ঢাকায় এবং বরিশালে ৩টি ফ্ল্যাটসহ সরকারি জমিতে করেছেন চার তলা ভবন। নামে-বেনামে কিনছেন একরের পর একর জমি। ঘুষের টাকার মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সাব-রেজিস্টার অসীম কল্লোল।
বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে তার জমি ও সম্পদের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র পোর্ট রোড এলাকায় সরকারি খাস জমিতে করেছেন ৫তলা ভবন। ঢাকায় কিনেছেন ২টি ফ্লাট, বরিশাল নগরীর হাসপাতাল রোড এলাকার অগ্রণী হাউজিং লিমিটেডের ‘ড্রিম প্যালেসে’ কিনেছেন কোটি টাকা ফ্ল্যাট। যার (ফ্ল্যাট নম্বর- ৩-অ)।
এ ছাড়াও সদর উপজেলার সায়েস্তাবাদে ১ একর ২৫ শতাংশ জমিতে তার স্ত্রীর নামে করেছেন সোনার বাংলা মৎস্য খামার ও অ্যাগ্রো ফার্ম। শহরতলীর কাগাসুরা মুকুন্দপট্রি রাস্তার দুই ধারে ৮০ শতাংশ জমি কিনে করেছেন সুগন্ধা এগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ খামার। একই এলাকায় কাগাসুরা বাজারের পাশে একশো শতাংশের জমি কিনে তার উপর করেছেন মালটা বাগান। নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কিনেছেন ১২ শতাংশ প্লট ও লাকুটিয়া বাজার এলাকায় ২০ শতাংশ জমির উপর করেছেন সুগন্ধা পোল্ট্রি খামার। তালতলী বাজারেও তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ইট, বালু ও রড সিমেন্টের দোকান।
সাব-রেজিস্ট্রার কল্লোল চাকরির সুবাদে যখন যেখানে বদলি হয়েছেন, সেখানেই কিনেছেন জমি ও ফ্লাট। তার সব সম্পত্তির পরিমাণ কয়েকশ কোটির বেশি বলে জানান স্থানীয়রা। একজন সাব-রেজিস্ট্রারের এতো সম্পত্তির উৎসাহ কোথায়, তা খতিয়ে দেখার দাবি জানান স্থানীয়রা।
সায়েস্তাবাদ এলাকার বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন জানান, একজন সাব-রেজিস্ট্রার এতো বিশালাকার জমি কীভাবে কিনেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশে এখন সব কিছুই সম্ভব, আর যা কিছু অবৈধ উপায়ে হচ্ছে তা সব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিই করছেন।
কাগাসুরা বাজার এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন, শুনেছি সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এই জমি কিনে মাল্টা বাগান করেছেন। এই বাগান দেখাশোনার জন্য একজন লোক নিয়োগ দেওয়াও রয়েছে এখানে। মাঝে মাঝে সাব-রেজিস্ট্রার এখানে এসে ঘুরে যান। এ ছাড়াও এই এলাকায় তার আরও কয়েকটি বিশালাকার প্লট রয়েছে।
সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল-এর বিভিন্ন এলাকার সম্পদ ও জমির খোঁজ নিতে গেলে তার ছেলে ফোন দিয়ে এ প্রতিবেদককে দেখা করে চা পান করার কথা বলে এবং সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানায়।
এ ব্যাপারে বরিশাল সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এত সম্পত্তি আমার নেই। তবে বরিশালে ১টি, ঢাকায় ২টি ফ্লাটসহ ৫ তলা ভবন আছে। এ ছাড়া কিছু জায়গা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসব সম্পত্তি ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে আছে। ফাইলের বাইরে এক শতাংশ জমিও নেই। সরকারকে প্রতি বছর এসব সম্পত্তির ট্যাক্স দেই। তা ছাড়া এসব নিয়ে দুই-তিনবার দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে ডাকা হয়েছিল। তারা সম্পদের বিবরণী খতিয়ে দেখেছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার হয়ে যদি অবৈধভাবে কোনো কিছু করে থাকেন, তাহলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।