মোঃ রোকনুজ্জামান শরীফ : শঙ্কা`শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশী পরিচিত।শঙ্কা`র অর্থ ভয়,বিপদ,দুর্বল,ভীত ইত্যাদি।আজকাল সমাজের প্রতিটি মানুষ কেমন যেন শঙ্কার মধ্যে দিন পার করছেন।কিন্তু কেন?প্রশ্নটির উত্তর জেনেও মনে লালন করছেন।রাস্তাঘাটে যাতায়াতের সময় মানুষের কথাবার্তা বা ইঙ্গিত এ শঙ্কার পরিবেশ বুঝতে পারছেন।আপনি নিরাপদ বোধ করছেন না!
সম্মানিত পাঠক,
আপনি ভাবছেন মূল বিষয়টি কি?মূল বিষয়টি সব সময় আপনার মধ্যে কাজ করছে, তথাপি আপনি শঙ্কা`কে শঙ্কা ভেবে নিরবে দিন পার করছেন,মনের মধ্যে লালন করছেন কোন রকম প্রতিবাদ না করে।কি প্রতিবাদ করার আছে আপনার?নিশ্চয়ই ভাবছেন একটা কিছু করার। ঝামেলা মুক্ত থাকবেন ভেবে এক সময় নীরব হয়ে যান। হ্যা,এই নিরবতাই এক ধরনের প্রতিবাদের ভাষা।অপেক্ষায় থাকুন সময় বলে দিবে সমাধানের পথ।
প্রিয় পাঠক,
কোন না কোন কারনে নিশ্চয়ই আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমুতে পারছেন না,স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না বা বাক স্বাধীনতা প্রকাশ করতে পারেন না অথবা আপনার কাছে ভাল না লাগা এমন কিছু।আবার তা যদি নিয়ন্ত্রন করেন কোন রাজনৈতিক দলের অসুস্হ নেতা,পাতিনেতা বা তেল মারা চামচা তাহলে তো কথাই নেই।তার পেশী শক্তির কাছে আপনি তুচ্ছ বা অসহায়।
আপনি উচ্চ শিক্ষিত,বংশীয়,ভদ্র?ঝুলিতে রাখেন আপনার ঐ সব বিশেষন।রাজনীতিতে ঐ সব বিশেষনের দরকার এককালে ছিল,এ যুগে নেই।শুধু অর্থ,তেলবাজ আর মিথ্যার কৌশলটা ভাল করে রপ্ত করলেই কেল্লাফতে।
নেতা কে? যিনি সঠিক নের্তৃত্ব দেন।এই সঠিক নের্তৃত্ব দেয়ার মতো নেতা খুবই কম।নগন্য সংখ্যক থাকলেও তাঁরা সম্মান বাঁচাতে আড়ালে থাকেন।স্বাধীনতাপূর্ব ও পরের নের্তৃত্ব নিয়ে আজও গর্ভে বুক ভরে যায়।স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের অবিভাবক,সাধারন মানুষ,দিনে-রাতে দরকারী কাজে ঘর থেকে বের হওয়া পথযাএী,প্রজাতন্ত্রের সেবক,অফিসগামী কর্মকর্তা-কর্মচারী,মায়ের জাত বলে খ্যাত নারী মা-বোনেরা তথা সমাজের সর্বস্তরের মানুষ শঙ্কার মধ্যে বিরাজমান।সমাজের শান্ত-নিরীহ মানুষদেরকে,এই সমাজেরই এক শ্রেনীর নগন্য সংখ্যার বিপদগামী মানুষ নামের প্রানীরা শঙ্কা তৈরীতে রত থাকে যা শান্ত মানুষের মনে-প্রানে পীড়া দিয়ে সমাজকে অশান্ত করে তোলে।
কে দায়ী এ জন্য?নিশ্চয়ই অশান্ত রাজনীতি।কে তৈরি করল অশান্ত রাজনীতি?জবাব আসবে অসুস্থ্য রাজনৈতিক নেতা।স্বার্থান্বেষী অসুস্থ নেতা দিয়ে রাজনীতি হয়না,মানুষের কল্যান হয় না,দেশ তার কাছে কিছুই আশা করতে পারে না।অসুস্হ্য নেতা নিজের স্বার্থ উদ্ধারে অর্থ গুছিয়ে ছিটিয়ে কিছু অসুস্হ্য শিষ্য ডেকে দল ভাড়ী করে মটর শোভাযাএা,সমাবেশ দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। সে ভাবেনা যে,মানুষ এটা গ্রহণ করতে চায় না।এ নেতা মনে করে,সে কি যেন একটা হয়ে গেছে।গাঁ -য়ে মানেনা আপনি মোড়ল।পছন্দের নেতার ছবির পাশে সুবিধামত নিজ ছবি সাটিয়ে মোড়ল হতে চায়।যতসব লজ্জাহীন অখ্যাত-কুখ্যাত নিশাচর,অসুস্হ্য নেতার আহবানে দল ভারী করে সমাজে অশান্তি ছড়ায়।
সর্বস্ব হাড়িয়ে একদিন ঐ নেতা,পাতিনেতা আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে ভবিষ্যতেও হবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা মাএ।আর ঐ অসুস্হ্য শিষ্য (বোকা মানুষ)বোঝার চেষ্টা করেনা যে রক্ষনশীল কু-বুদ্ধি ধারনকরা নেতা,পাতিনেতা , উপনেতা,সহনেতা,ভারপ্রাপ্ত নেতা যাকে তাকে সুবিধামত ব্যবহার করছে বা তারা ব্যবহৃত হচ্ছে।আর এদের কারনে সমাজ,দেশ দুষিত হচ্ছে,স্বাভাবিক কাজ-কর্ম বাধাগ্রস্হ হচ্ছে ও সমাজে আতংক ছড়িয়ে পরছে।এই পাতি নেতারা সমাজে আতংক ছড়িয়ে নোংরামি করছে।এদের প্রতিহত করতে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভূমিকা জরুরী হয়ে পরেছে।এদের আষ্ফালনে সমাজ আজ পীড়াগ্রস্হ কান্ডারিহীন জাহাজের মত অজানা কোন গন্তব্যে নিমজ্জিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
রাষ্ট্রযন্ত্রসহ সমাজের সকল সচেতন শুভজনের ঘুমভাঙ্গা অতি জরুরী।একজন আদর্শ নেতার গুনাবলী আদর্শ দিয়ে জড়ানো।আজ অথবা অতীতে যারা নিজ দলীয় আদর্শ নিয়ে লাফালাফি করেছে তাদের মধ্যে কি দেশ প্রেমের কোন বিন্দুমাএ লক্ষন আছে?তারা শুধু মূখোস পরে মিষ্টি কথা বলে পাবলিক ঠকায়।মানুষের হৃদয় মন্দিরে স্হান করে নেয়া গুনের অধিকারী নের্তৃত্ব আজ আমাদের খুবই প্রয়োজন।আজকাল একান্ত প্রয়োজন না হলে সহজ সরল ভাল কোন লোক কোন নেতার কাছে যেতেই চান না। তিনি জানেন,ওখানে গেলে
সম্মান রক্ষার ঝুঁকি আছে। বিভিন্ন শ্রেনী পেশার পেশী শক্তি নেতাকে ঘিরে যার যার স্বার্থ আদায়ে ব্যস্ত।নেতা সাহেব জানেন,দল ভারী করতে তেলবাজ লোক দরকার।কারন একটু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কোন লোক তো তার কাছে যাবেন না।
দেশ গঠনে যুগে যুগে কমবেশি সকলের অবদান আছে যা অস্বীকার করা যায় না।এ কে এম ফজলুল হক,মাওঃ আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এ রকম গুনের অধিকারী একাধিক যোগ্য নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।তাঁরা মানুষের অধিকারের উৎস তৈরী করে উপহার দিয়েছিলেন কিন্তু এখন তাঁদের দেয়া অধিকার হরন করা হচ্ছে নানা রকম কুটকৌশলে।ঐ সময়কালের নেতৃত্ব নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নিঃস্বার্থ থেকে পকেটের পয়সা খরচ করে সাধারণ মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছিলেন।তাঁদের অস্বীকার করা মানে মুক্তিযুদ্ধকে মুছে ফেলা।মুক্তিযুদ্ধে ১১টি সেক্টরের দায়িত্বে থাকা সূর্য সন্তান কমান্ডাররা জীবন বাজী রেখে দেশ মুক্ত করেছিলেন।তাঁদের সম্মান নিয়ে আজ টানাহেঁচড়া হচ্ছে।মুক্তিযুদ্ধের সাথে জরানো নক্ষত্রসম নেতৃত্ব,ইতিহাস থেকে মুছতে চাইছে।
লজ্জার শেষ কোথায় নিয়ে গেছে,আফসোস!যারা দেশের স্বাধীনতা দেখেনি কিংবা ঐ সময় জন্মই হয়নি তিনি কি আর বুঝবেন?মুক্তি যুদ্ধের নয় মাসের রক্তঝরা ইতিহাস সাজানো কোন গল্প বা নাটক নয়।শিশু চোখে যতটুকু দেখেছি,জীবন বাঁচাতে হোগলাপাতার বিলে ছিপ নৌকায় অনাহারে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি,মনে হচ্ছিল এই বুঝি পাকসেনারা ধরে নিয়ে যাবে।যা ভুক্তভোগী না হলে বুঝতে পারা অসম্ভব।সাজানো সংসারে মাতব্বরি করা খুবই সহজ।অতীত থেকে আজকাল কিছু নেতার আস্ফালন দেখলে অবাক হতে হয়।
উনি মনে করেন অবৈধ ক্ষমতা চর্চা করতে পারলেই মানুষ যোগ্য নেতা মনে করবে কিন্তু বাস্তবে কি তাই?দেখা যাচ্ছে কিছু নেতা কৌশলে সমাজে আতঙ্ক তৈরী করে ক্ষমতা চর্চা করে।যাকে বলে সাইক্লোজিক্যাল বা মনসতাত্ত্বিক সন্ত্রাসী।কেউ প্রত্যক্ষ সন্ত্রাসী করে,আবার কেউ পরোক্ষ সন্ত্রাসী করে।তাহলে যারা পরোক্ষ সন্ত্রাসী করে তারাও সন্ত্রাসীর অন্তর্ভুক্ত।
তাদেরকে বলা হয় সাইক্লোজিক্যাল সন্ত্রাসী।তবে সবাই যে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে তা কিন্তু নয়।ব্যতিক্রম সব ক্ষেত্রে আছে ও থাকবে।এই সমাজের বড় বিচারক ও পরীক্ষক মানুষেরা নের্তৃত্ব মূল্যায়ন করতে জানে,নির্ণয় করতে পারে যদি সুযোগ পায়।কিন্তু দুষ্ট সুযোগ সন্ত্রাসী স্বার্থান্বেষী অর্থলোভী নের্তৃত্বের কারণে আজ সমাজ শঙ্কাগ্রস্হ।মিথ্যা বলা মহা পাপ—এ ধ্রুব সত্য কথাটি আজ ডুবতে বসেছে।
সমাজের সাধারণ শুসিল মানুষ সাবধান!যুগে যুগে গোঁবরে পদ্মফুল ফোটে ঝড়ে যায়।কৃতকর্মের ফল দিবালোকে ফলবে।যেখানে অন্যায়,সেখানে প্রতিবাদ।এ কথাটি অনুসরণ করলে সমাজে শঙ্কা থাকে না।অসুস্থ নের্তৃত্বের কারণে মানুষ এখন প্রতিবাদ করারও সাহস পায়না।এজন্য দায়ী কিন্তু ঐ অসুস্থ নেতা।অতএব আমরা সুস্থ নেতার পদাঙ্কনুসারন করব।
সাধারণ সম্পাদক
মঠবাড়িয়া প্রেসক্লাব
পিরোজপুর